শ্রবণ প্রতিবন্ধীতা কি? শ্রবণ প্রতিবন্ধীতা কেন হয়?| What is Hearing impairment? Causes of Hearing Impairment||

শ্রবণ প্রতিবন্ধীতা কি? শ্রবণ প্রতিবন্ধীতা কেন হয়?| What is Hearing impairment?  Causes of Hearing Impairment|| 



শ্রবণ প্রতিবন্ধীতা:

সাধারণভাবে শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা বলতে বোঝায় শ্রবণের কোনোরকম ক্ষতি বা সমস্যা যার কারণে  শুনতে সমস্যা হয়,ব্যতিক্রম শুনতে পায় অথবা শুনতে পায় না। সাধারণত শ্রবণ প্রতিবন্ধীতা দুই ধরণের দেখা যায়। একটিকে শ্রবণ অক্ষমতা বা প্রতিবন্ধিতা  ও অন্যটিকে বধিরতা বলা হয়। 

কানে কম শোনা বা কানে খাটো শোনা,কানে যেকোনো ধরনের ক্ষতির কারনে কম শোনা হলো শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা বা প্রতিবন্ধিতা। অপরদিকে কোন ব্যক্তি যদি কানে শুনতে সম্পূর্ণরুপে অক্ষম হয়,তাহলে ওই ব্যক্তির অবস্থাকে বধিরতা বলে।

আমেরিকার Individual with disabilities act(1990) তে বলা হয়েছে,"শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা হলো এমন এক অবস্থা যা ব্যক্তির মধ্যে যন্ত্র ছাড়া বা যন্ত্রসহ অবস্থায় ভূষাগত উচ্চারণ করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অর্থের উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয় এবং তার শিক্ষাগত বিকাশে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।"

আবার যেসব শিশুরা জন্মগতভাবে কানে শুনতে পায়না তাদের বাচনিক বিকাশ (কথা বলতে পারা ও শিখতে পারা) সঠিকভাবে হয় না,ব্যক্তির অবস্থাকে বধিরতা বলে এ কারনেই জন্মগতভাবে যারা বধির তাদের মূক বা বোবা বলা হয়। 

মানুষের ত্রুটিযুক্ত শব্দের মাত্রার মধ্যে উৎপন্ন শব্দ যদি কোনো ব্যক্তির শ্রবণ অনুভূতি জন্মাতে ব্যর্থ হয় অথবা কানের কোনো গঠনগত কারনে কোনো ব্যক্তি সঠিকভাবে শুনতে না পায় অথবা কোনো না কোনো কারনে শুনতে না পাওয়াকেই বলা হয় শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা বা প্রতিবন্ধকতা আর যে শুনতে পায়না অর্থাৎ যার কানে শুনতে সমস্যা তাকে বলা হয় শ্রবণ প্রতিবন্ধী। 

আরো পড়ুনঃ

ব্যতিক্রমধর্মী শিশু কি? ব্যতিক্রমধর্মী শিশুর বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?।Definition of Exceptional Child। Charracteristics of Exceptional Child ।।


শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার কারণসমূহ:

শ্রবণ প্রতিবন্ধিতার কারনসমূহকে ৩ টি অংশে ভাগ করা যায়। যথাঃ

১। জন্ম পূর্ববর্তীকালীন

২। জন্মকালীন 

৩। জন্ম পরবর্তীকালীন 


জন্ম পূর্ববর্তীকালীন:

১। বংশগত বা জিনগত বধিরতা: 

 অনেক অনেক বিশেষজ্ঞরাই মনে করেন বধিরতা বংশগত কারনেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বধির পিতা-মাতার সন্তান বধির হতে পারে। ঘনিষ্ঠ রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিয়ে করলেও বধির শিশুর জন্ম হতে পারে।

২। অপুষ্টি ও অসামঞ্জস্যতা:  

যদি পিতামাতার রক্তে অসামঞ্জস্যতা থাকে এবং গর্ভবর্তী মা অপুষ্টিতে ভোগেন তাহলে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু জন্মাতে পারে।


৩। ঔষধ ও মাদকের প্রভাব:  

গর্ভবতী মা যদি গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরেনের ঔষধ(অ্যাসপিরিন,মালিডোমাইজড) খেয়ে থকেন তাহলে এর প্রভাবে জন্মানো শিশু শ্রবণ প্রতিবন্ধী হতে পারে।

এছাড়াও জন্ম পূর্ববর্তীকালীন কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর কারনেও শিশুর শ্রবণের সমস্যার সমষ্টি হয়। যেমন: বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ, ভাইরাসের সংক্রমণ। 


জন্মকালীন কারণ:

১। অসাবধানতা:  

প্রসবকালীন সময়ে মা বা ডাক্তারের অসাবধানতার কারনেও  সদ্য ভূমিষ্ট শিশু বধির হতে পারে।

২। অক্সিজেনের সল্পতা: 

জন্মকালীন সময়ে শিশুর যদি অক্সিজেনের সংকট দেখা দেয় তাহলে সেটির প্রভাবেও শিশু বধির হতে পারে।


জন্মপরবর্তী কারণ:

১। ভাইরাসের সংক্রমণ : 

হাম,মাম্পস,মেনিনজাইটিস প্রভৃতি রোগের কারণে শ্রবণের বৈকল্য হতে পারে।

২। বাহ্যিক আঘাত:  

ঠান্ডা লাগা,গলা ফুলে ওঠা,এলার্জি প্রভৃতি কারণে বধিরতা সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া কানে বাইরের কঠিন পদার্থ, দূষিত পানি,মাটি ইত্যাদি প্রবেশ করলে অথবা কানের খৈল বা ময়লা এর কারনে শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা হতে পারে। আবার কোনো দূর্ঘটনার ফলে মস্তিষ্কে আঘাতের কারনে কর্টেক্সের ক্ষতি হলে শ্রবন প্রতিবন্ধীতা দেখা দিতে পারে।

আরো পড়ুনঃ

শিখন প্রতিবন্ধীতা কি? শিখন প্রতিবন্ধীতা কেন হয়? শিখন প্রতিবন্ধীতার বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি? What is Learning Disability? Charracteristics of Learning Disability। causes of Learning Disability।।


৩।দীর্ঘমেয়াদী ঔষধ সেবন: 

কুইনাইন, এ্যামাইনো গ্লাইকোসাইড ইত্যাদি অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করলে এর প্রভাবেও শ্রবণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এছাড়াও মিল, কলকারখানা ইত্যাদি থেকে যে তীব্র মাত্রার শব্দ তৈরি হয় তার থেকে মধ্যকর্ণ ও কানের পর্দার কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাঘাত ঘটে, আর এর পলেও শ্রবণে সমস্যা তৈরি হতে পারে। আবার দেখা গেছে, মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এক ধরনের শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা দেখা দেয় যাকে বার্ধক্যজনিত শ্রবন অক্ষমতা বলা হয়। আবার কানের জন্মকালীন গঠনগত ত্রুটির কারনে কর্ণকুহর বা কর্ণে ছিদ্র থাকে না যাকে কনজেনিটাল এস্টান্সিয়া  বলা হয়।


শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার শ্রেনিবিভাগ:

যারা শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করে অথবা না করে কেবল কানের সাহায্যে অন্যের কথা শুনতে না পায় তাদেরকে শ্রবন প্রতিবন্ধী বলা হয়। শ্রবন ক্ষমতা মাপার এককের চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডেসিবেল বলা হয়। মানুষের স্বাভাবিক শ্রবন ক্ষমতা ০-২৬ ডেসিবেল।

নিচে ডেসিবলের ভিত্তিতে শ্রবণ প্রতিবন্ধিতার শ্রেণিবিভাগ দেওয়া হলো:

শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার ধরণ:

  1.  মৃদু মাত্রার শ্রবণ প্রতিবন্ধী -(২৭ থেকে ৪০ ডেসিবল)
  2. মধ্যম মাত্রার শ্রবণ প্রতিবন্ধী -(৪১ থেকে ৫৫ ডেসিবল)
  3. গুরুতর মাত্রার শ্রবণ প্রতিবন্ধী -(৭১ থেকে ৯০ ডেসিবল)
  4. চরম মাত্রার শ্রবণ প্রতিবন্ধী-(৯০ ডেসিবলের বা তার উর্ধ্বে)
আরো পড়ুনঃ


Writen By: Shahriar Tanzid Shaon

                    


আমি শাহরিয়ার তানজিদ শাওন। আমি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত আছি। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্লগে আর্টিকেল লিখতে ভালো লাগে। আলহামদুলিল্লাহ


কোন মন্তব্য নেই

Blogger থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.