শিখন প্রতিবন্ধীতার ধরণসমুহ কি কি? ডিসলেক্সিয়া কি? ডিসগ্রাফিয়া কি? ডিসক্যালকুলিয়া কি? ডিসপ্রাক্সিয়া কি?


শিখন প্রতিবন্ধীতার ধরণসমুহ :

Types of Learning Disability


শিখন প্রতিবন্ধীতা হলো শিশুর এমন একটি অবস্থা যার প্রভাবে শিশু সঠিকভাবে বলতে পারেনা, পড়তে পারেনা, লিখতে পারেনা, বানান করতে পারেনা, উচ্চারণ করতে পারে না এবং গণিত কষাতে সমস্যা হয়। 

শিখন প্রতিবন্ধীতার ধরন সমূহের মধ্যে অন্যতম প্রধান ধরনসমূহ হলো:

১। ডিসলেক্সিয়া 

২। ডিসগ্রাফিয়া 

৩। ডিসক্যালকুলিয়া

 ৪। ডিসপ্রাক্সিয়া


ডিসলেক্সিয়া(DYSLEXIA):

Dyslexia-Learning (read,write,spell,speak) disorder.

ডিসলেক্সিয়া হলো একটি শিখন অক্ষমতা যা একটি শিশুর পড়তে পারা, বানান করতে পারা, লিখতে পারা এবং কথা বলা সক্ষমতা উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে । যে সকল শিশুরা ডিসলেক্সিয়ার স্বীকার বা যে সকল শিশুদের ভিতর ডিসলেক্সিয়া রয়েছে তাদের বাহির থেকে দেখতে বেশ চটপটে(smart) এবং পরিশ্রমী হয়ে থাকে। কিন্তু ঠিক তখনই সমস্যার সম্মুখীন হয় যখন তারা কোনো শব্দ শুনতে পায় তখন ওই শব্দটি প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সমন্বয় করতে পারে না। এরা স্বাভাবিক শিশুদের মতোই এবং তারা তাদের সহপাঠী বা বন্ধুদের সাথে বেশ সুন্দরভাবেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

 এই সকল শিশুদের ভেতরে কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা যায় :

  •  পড়তে সমস্যা হয় অর্থাৎ ধীরে ধীরে পড়াশোনা করে,
  • বানানে সমস্যা হয় 
  • এবং শব্দ এলোমেলো করে ফেলে।


ডিসলেক্সিয়ার বৈশিষ্ট্যসমূহ(Characteristics of Dyslexia) :

১। Dyslexia is neurological (লেখা এবং কথা বলার জন্য যে তথ্যগুলো প্রয়োজন হয় সেই তথ্যগুলো মস্তিষ্কে ভিন্নভাবে প্রক্রিয়াকরণ হয়)।

২। Dyslexia is language-based( ডিসলেক্সিয়া কোনো দৃষ্টিগত সমস্যা নয়। এটি ভাষাভিত্তিক একটি সমস্যা যেটির কারণে ভাষা প্রক্রিয়াকরণে সমস্যা হয়)।

৩। Dyslexia is Genetic(এটি হলো একটি বংশগত সমস্যা যা পরিবারের থেকে চলে আসে)।

৪। Dyslexia is common(১ থেকে ৫ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে কোনো না কোনো একটা সময় Dyslexia থাকে)।


ডিসলেক্সিয়া উপসর্গ ও লক্ষণসমূহ:

১। Decoding Word: শব্দের সাথে বর্ণের সমন্বয় করার দক্ষতা।  আর এই কাজটি Dyslexia শিশুরা করতে পারেনা।

২। Phonemic awareness : বর্ণের উচ্চারণের মাধ্যমে শব্দ সনাক্ত করার দক্ষতা। এই কাজটি এই শিশুরা করতে অক্ষম।

৩। More Complex Skill: ব্যাকরণ,রচনা লিখন,শুদ্ধভাবে পড়তে পারা,বাক্য গঠন এবং বড় ধরণের লেখা লিখতে পারা ইত্যাদির দক্ষতা। এই দক্ষতাগুলোও অর্জন করতে এদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

৪। Emotion and Behaviour : ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের আচরণগত পরিবর্তন হয় এবং এরা বেশিরভাগ সময়ই হতাশায় ভোগে। যেমনঃ পড়া থেকে বিরত থাকা,পড়ার সময় অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া প্রভৃতি। 

৫। Everyday skill and Activities :

এরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তিগত, সামাজিক বিভিন্নক্ষেত্রে (কথোপকথন, স্মৃতিতে দীর্ঘক্ষণ কোনোকিছু সংরক্ষণ করা,মিথস্ক্রিয়ামূলক কাজকর্ম)  চাপ অনুভব করে।

Causes of Dyslexia :

১। জিনগত এবং বংশগত কারণে ডিসলেক্সিয়া হয়ে থাকে।

২। মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটলে এই অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।


ডিসক্যালকুলিয়া(Dyscalculia):

Mathematical Disorder

ডিসক্যালকুলিয়া হলো সংখ্যা সম্বন্ধীয় বা সংখ্যাজনিত একটি নির্দিষ্ট ও ক্রমাগত অক্ষমতা বা অপূর্ণতা যার প্রভাবে শিশুরা গনিত করার সময় বা বুঝতে অনেক বড় ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়।

অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে, সংখ্যা সম্পর্কিত সাধারণ তথ্য বা ধারণা(গনিতের মৌলিক বিষয়সমূহ), ধীর গতিতে অঙ্ক করা ইত্যাদি শিক্ষা সম্পর্কিত অক্ষমতা হলো ডিসক্যালকুলিয়া।


ডিসক্যালকুলিয়ার উপসর্গসমুহ হলো:

  • গনিতের যে মৌলিক ধারণাগুলো(যোগ,বিয়োগ) এগুলো বুঝতে পারে না
  • পূনরুদ্রেক করার ক্ষমতা খুবই সীমিত থাকে
  • সংখ্যা সম্পর্কে সাধারণ ধারণা এবং অনুমান ক্ষমতা খুবই কম থাকে
  • Place value- একক,দশক,১০,২০,৩০ এই ধারাবাহিকতা বুঝতে পারে না। 
  • কোনো একটি অঙ্ক সমাধান করার পর যে সমাধানটা পেয়েছে সেটা সঠিক কিনা সেটা বুঝতে পারে না।
  • এরা ক্যালকুলেটরের ব্যবহার করতে সমস্যার সম্মুখীন হয়। 
  • পাটিগনিত বুঝতে পারে না।
  • প্রথমদিকে সহজ যোগ,বিয়োগ,গুন,ভাগ করতে পারে কিন্তু একটু কঠিন কিছু করতে দিলেই আর করতে পারেনা। 


Causes of Dyslexia:

১।জেনেটিক বা বংশগত বৈশিষ্ট্য : অধিকাংশ অস্বাভাবিকতাই বংশগত বৈশিষ্ট্য থেকে তৈরি হয়ে থাকে।  

২। জ্ঞানীয় অক্ষমতার কারণেও ডিসক্যালকুলিয়া হতে পারে।




ডিসগ্রাফিয়া (Dysgraphia):

 ডিসগ্রাফিয়া হলো লিখনে সমস্যাসংক্রান্ত বিকার। 

অর্থাৎ এটি হলো এমন এক ধরণের অক্ষমতা যার প্রভাবে শিশুরা সুন্দর করে লিখতে পারে না,লিখলে লেখা বাঁকা হয়,হাতের সুক্ষ্ম কাজের দক্ষতার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়।


ডিসগ্রাফিয়ার কিছু সাধারণ উপসর্গ:

বিশ্রী লেখা বা অগছলো লেখা হলো অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো:

  • সঠিকভাবে অক্ষরগুলো গুছিয়ে লিখতে পারে না(Forming letters)
  • ব্যাকরণের সঠিক ব্যবহার করে বাক্য লিখতে পারে না
  • একটি শব্দের পরে অন্য একটি শব্দে কতটুকু ফাঁকা রাখতে হবে সেটা বুঝতে পারে না।
  • লেখাগুলো সোজা  লাইনে  লিখতে পারে না।
  • লিখলে বানান ভুল হয়।


কারণসমূহ :

তেমন নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই তবে বলা হয়ে থাকে জিনগত বা বংশগত বৈশিষ্ট্যের কারণে ডিসগ্রাফিয়া হয়ে থাকে।


Dyspraxia(ডিসপ্রাক্সিয়া) :

Writing Disorder

এটাকে বলা হয়ে থাকে DCD(Developmental Co-ordination Disorder)

এটি হলো একটি বংশগত অক্ষমতা যার প্রভাবে শিশুদের বৌদ্ধিক যে দক্ষতা সেটার উপর বিরুপভাবে প্রভাব ফেলে।

এই রোগটি মেয়েদের থেকে ছেলেদের বেশি হয়ে থাকে।


এই অক্ষমতায় স্বীকার ব্যক্তিদের কিছু ক্ষেত্রে অনেক বেশি দক্ষতা থাকে এবং অনেকগুলো অক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়:

Possible Strength:

১.সৃজনশীল দক্ষতা

২.কৌশলি চিন্তাভাবনা 

৩। সমস্যা সমাধানে পারদর্শী 

৪। স্মৃতিতে দীর্ঘক্ষণ অনেক কিছু সংরক্ষণ করে রাখতে পার।


Possible Difficulties:

১. কোনোকিছু সাজিয়ে ক্রমান্বয়ে করতে পারে না।

২. হাতের কাজগুলো খুব ধীরে ধীরে সম্পন্ন করে।

৩. শিক্ষা উপকরণসমূহ(মার্কার,পেন ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে না।

৪. ল্যাবরেটরি বা ব্যবহারিক কাজগুলো করার সময় সমস্যার সম্মুখীন হয়।

৫. Time Management SenseSense খুবই সীমিত থাকে।


#SHAHRIARTANZIDSHAON


Read More_

শিখন প্রতিবন্ধীতা কি? শিখন প্রতিবন্ধীতা কেন হয়? শিখন প্রতিবন্ধীতার বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?

ব্যতিক্রমধর্মী শিশু কি? ব্যতিক্রমধর্মী শিশুর বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?

IDEA অন্তর্ভুক্ত ১৪ টি অক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করা হলো || 14 Disabilities under IDEA Act 2004||  


 

1 টি মন্তব্য:

Blogger থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.