দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষণ কৌশল|Strategies for Hearing Impaired Children||

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষণ কৌশল|Strategies for Hearing Impaired Children||

Visual Impairment
 

 

 উপযোগী পাঠক্রম :

পাঠক্রমের দৃষ্টিকোণ থেকে এই শিশুরা অন্য শিশুদের থেকে কোনো অংশে আলাদা নয় । কারণ বিভিন্ন গবেষণায় লব্ধ ফল থেকে জানা যায় এদের বুদ্ধির বিকাশ অন্য শিশুদের সমমানের । যে সমস্ত শিশুরা চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্সের সাহায্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা সরঞ্জামকে কাজে লাগিয়ে আলোকিত ব্যবস্থায় পড়াশোনা করতে পারে , তাদের জন্য মূলস্রোতের বিদ্যালয়ে সচেতন শিক্ষকরাই প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করতে পারেন । যে সমস্ত শিশুরা অতিক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন এবং প্রায় দৃষ্টিহীন তাদের সাধারণ পাঠক্রমে প্রবেশ করানোর আগে এক বিশেষ পাঠক্রমের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যা Plus Curriculum বা Compensatory Curriculum নামে পরিচিত । সংক্ষেপে তার বিষয়গুলি নীচে বলা হল

( ১ ) জ্ঞানেন্দ্রিয়ের প্রশিক্ষণ

( ২ ) ব্রেইল পদ্ধতির প্রয়োগ

( ৩ ) অ্যাবাকাস পদ্ধতির প্রয়োগ

( ৪ ) পরিবেশ পরিচিতি ও নিরাপদ হাঁটাচলার প্রশিক্ষণ

( ৫ ) প্রাত্যহিক জীবন - যাপনের উপযোগী দক্ষতার প্রশিক্ষণ

( ৬ ) রেকর্ডকৃত বই

( ৭ ) হাতের লেখার অভ্যাস

( ৮ ) টাইপ করার অভ্যাস

নিম্নে এগুলো ব্যাখা করা হল:

( ১ ) জ্ঞানেন্দ্রিয়ের প্রশিক্ষণ: শিশু তার পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা ও তথ্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অর্জন করে । দর্শনেন্দ্রিয় চোখ সেখানে প্রধান ভূমিকা পালন করে । যে শিশু দর্শনেন্দ্রিয়ের কর্মক্ষমতা থেকে বঞ্চিত , সেখানে অন্য চারটি ইন্দ্রিয় আরোও কার্যকরী ও উন্নত হয়ে ওঠে এবং দর্শনেন্দ্রিয়ের পরিপুরক হিসেবেও উপযুক্ত ভূমিকা পালন করে । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় , দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর অবণেন্দ্রিয়কে প্রখর করার জন্য তাকে দিতে হবে বিভিন্ন শব্দযুক্ত খেলনা ও ব্যবহার্য সামগ্রী । বিভিন্ন বস্তুর শাব্দের প্রকৃত রূপ ক্রমে শিশু চিনতে শিখবে । শব্দের উৎস শিশুর থেকে কতদূরে রয়েছে এবং কোনদিকে রয়েছে তা ক্রমে বুঝতে শিখবে । এই অভ্যাসগুলি তার বিদ্যালয়ের শিক্ষালাভের ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে । বিদ্যালয়ে শিক্ষা সামগ্রী নির্বাচনের সময়ে এই শিশুদের জন্য শব্দ , স্পর্শ ও গন্ধের সাহায্যে চিনে নেওয়া যায় এমন সামগ্রী বাছাই করতে হবে । 

 

আরো পড়ুনঃ

আচরণগত অক্ষম শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ কৌশল | Teaching strategies for Behavioural Disabled Students ||

 

( ২ ) ব্রেল পদ্ধতির প্রয়োগ: দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষায় সবচেয়ে প্রাচীন এবং বর্তমানেও প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি হল ব্রেল । মঁশিয়ে লুই ব্রেল ( ১৮০৯-১৮৫২ ) দীর্ঘদিন গবেষণার পর এই পদ্ধতি প্রচলন করেন , যা সারা বিশ্বেই স্বীকৃত পদ্ধতি । ছয়টি বিন্দুর সাহায্যে অক্ষর ও সংখ্যা লেখা হয় । এই বিন্দুগুলি হাতের আঙুলের স্পর্শের সাহায্যে পড়াই হল ব্রেইল পাঠ্য পড়া ।

( ৩ ) অ্যাবাকাস : গণিতের শিক্ষায় প্রয়োজনীয় যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস এশিয়া মহাদেশে উন্নত হয়েছে । এতে ১৫ টি দণ্ড আছে । একটি বিভাজন দণ্ড অ্যাবাকাসের ১৫ টি দণ্ডকে আড়াআড়ি দিকে এমনভাবে ছেদ করেছে যে , ২/৩ অংশ বিভাজন দণ্ডের নীচে , ১/৩ অংশ বিভাজন দণ্ডের উপরে রয়েছে । দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যথাযোগ্য প্রশিক্ষণের পর এগুলির সাহায্যে যোগ , বিয়োগ , গুণ , ভাগ , শতাংশ , বর্গমূল ইত্যাদি নির্ণয় করতে পারেন । বিশেষ বিদ্যালয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক - শিক্ষিকা ছাড়া এই ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় । তবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার সাথে যুক্ত সকলেরই এই সম্ভাবনা সম্বন্ধে অবহিত থাকা বাঞ্ছনীয় ।

( ৪ ) পরিবেশ পরিচিতি ও নিরাপদ হাঁটাচলার প্রশিক্ষণ : দৃষ্টিহীন শিশুর পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য আহরণের জন্য এবং নিরাপদে পরিবেশে হাঁটাচলার জন্য বিশেষ অনুশীলন দরকার হয় । আংশিক বা অতিক্ষীণ দৃষ্টির শিশুদের জন্য এই প্রশিক্ষণ ঐচ্ছিক হলেও দৃষ্টিহীন শিশুদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ।

( অ ) দৃষ্টিমান সহযাত্রী পদ্ধতি ( Sighted Escort ) : দৃষ্টিহীন শিশু বা ব্যক্তি দৃষ্টিমান অবলম্বন বা Escort কে নির্ভর করে হাঁটা চলা করেন । দৃষ্টিমান অবলম্বন সামনে থাকেন এবং দৃষ্টিহীন তারে হাত অথবা কাঁধ স্পর্শ করে তাঁকে অনুসরণ করেন । এই পদ্ধতি নিরাপদ এবং স্বল্প আয়াসে এই অভ্যাস গড়ে ওঠে । কিন্তু এই পদ্ধতিতে সর্বদা একজন দৃষ্টিমান ব্যক্তির সাহচর্য দরকার হয় । এছাড়া দৃষ্টিহীন ব্যক্তি বা শিশুর নির্ভরশীলতার বোধ গড়ে ওঠে ।

( আ ) সহযোগী কুকুর ( Dog as Guide ) : আমাদের দেশ ভারতবর্ষ বা পূর্ব গোলার্ধের অন্যান্য দেশে এটি তত প্রচলিত নয় । পশ্চিমের দেশগুলিতে নিরাপদে চলাফেরার জন্য প্রশিক্ষিত কুকুরের সাহায্য নেবার কথা জানা যায় ।

( ই ) ছড়ির ব্যবহার ( Use of Cane ) : দৃষ্টিহীনদের স্বাধীন ও নিরাপদ হাঁটাচলার জন্য সর্বাধিক জনপ্রিয় পদ্ধতি হল সাদা ছড়ির ব্যবহার । দৃষ্টিহীন শিশু বা ব্যক্তি তার ছড়িটিকে ব্যবহার করে তার চারপাশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে ও বাধা সম্পর্কে সচেতন হয় । দিনের আলো ছাড়া অন্ধকারেও এটি ব্যবহার হয় বলে সাধারণত এটি সাদা রঙের হয় । বিদেশে বিছুরিত আলোক সংবেদনের ছড়ি বা Laser cane দেখা যায় , যার সাহায্যে দৃষ্টিহীন ব্যক্তি নিরাপদে অন্যকে সচেতন করে , বাধা অতিক্রম করে চলাফেরা করতে পারেন । 


 

৫। প্রাত্যহিক জীবনযাপনের উপযোগী দক্ষতার প্রশিক্ষণ ( Training of Daily living Skill ) : নিত্য প্রয়োজনীয় জীবনদক্ষতাগুলি শিশু তার পরিবেশে দেখে এবং অংশগ্রহণ করে আয়ত্ত করে । দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবার কারণে তাদের পরিবেশ পরিচিতি করাতে হয় ও জীবন দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিতে হয় । দৈনন্দিন জীবনযাপনের দক্ষতাগুলির মধ্যে থাকে

 • স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করা

• পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গঠন করা

• যথাযোগ্য স্থানে মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস গঠন করা

• নিজে হাতে খাওয়া , চুল আচড়ানো , পোশাক বদলানো ইত্যাদি কাজের অভ্যাস গঠন করা

• সামাজিক রীতি ও ভাব বিনিময়ের অভ্যাস গঠন করা ।

( ৬ ) রেকর্ডকৃত বই : লিখিত তথ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করার একটি উপায় হল লেখা অংশ পাঠ করে সিডি বা ক্যাসেটে ধরে রাখা । শ্রবণ দক্ষতাকে বৃদ্ধি করে , ন্যূনতম প্রশিক্ষণ যোগে ব্রেইলের থেকে সহজ উপায়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কাছে পাঠ্যবস্তু পরিবেশন করা যায় । তবে এই পদ্ধতি একতরফা হওয়াতে শিশুর পাঠের ও লেখার অভ্যাস হয় না এবং ছবি , মানচিত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা এসে যায় । দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুকে মূলস্রোতের বিদ্যালয়ে সমন্বিত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর কাজে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষক - শিক্ষিকা , শিশুটির বাবা - মা , শিশুটি নিজে এবং বিশেষ শিক্ষক সবগুলি বিষয়ের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা প্রয়োজন ।

৭। হাতের লেখার অভ্যাস ( Handwriting Exercise ) : হাতের লেখার জন্য হাত ও চোখের সমন্বয় ঘটা দরকার । দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মধ্যে যারা দৃষ্টিহীন তাদের এই সুযোগ নেই এবং যারা আংশিক ও অতিক্ষীণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তাদের এই সুযোগের সীমাবদ্ধতা আছে । কিন্তু গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায় যে , দৃষ্টিহীনরা ধারাবাহিক অনুশীলনের সাহায্যে নাম স্বাক্ষর করতে পারে এবং নির্দিষ্ট কিছু বর্ণ ও সংখ্যা লিখতে পারে । আংশিক ও অতিক্ষীণ দৃষ্টিমান শিশু তাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও হাতের লেখা অনুশীলন করলে সফলতা লাভ করে । হাতে লেখার স্পষ্টতা , গতি ও স্থানিক পরিমাপ সমবয়স্ক শিশুদের তুলনায় দুর্বল হয় । ফলে পরীক্ষা পদ্ধতি বা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তাদের লিপিকার ( Writer ) নেবার প্রথার অনুমোদন আছে ।

৮। টাইপ করার অভ্যাস ( Typing Exercise ) : প্লাস কারিকুলামে হাতের লেখা ও টাইপ করার বিষয়টি নতুন সংযোজন । হাতের লেখার অভ্যাসের মতো অনুশীলন করলে টাইপ করার দক্ষতাটিও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা অর্জন করতে পারে । বর্তমানে টাইপ মেশিন ও কম্পিউটার কীবোর্ড সহজলভ্য এবং ব্যবহারযোগ্য । টাইপ মেশিন বা কমপিউটারের কি বোর্ডে বর্ণমালাগুলির অবস্থান স্থির । তাই অনুশীলন করতে থাকলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীগণ অনায়াসে এর ব্যবহার শিখে যায় । নতুন ব্রেইল কম্পিউটারে লিখতে হলে টাইপ করার দক্ষতা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সহায়তা দান করে ।

 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা :

১। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুটির বাবা - মায়ের কাছে শিশুটির সামর্থ্য ও প্রবণতা সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন ও শিক্ষকের নজরে পড়া গুণাবলি সম্পর্কে বাবা - মাকে সচেতন করতে পারেন ।

২। শিশুটির বাবা - মাকে পালনীয় কর্মসূচি ও লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে অবহিত করতে পারেন ।

৩। শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীদের তাদের বন্ধুটির দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন করে ঐ শিশুটির প্রতি সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে পারেন ।

৪। ব্যাপকতর ক্ষেত্রে বিদ্যালয় শিক্ষক , বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্থানীয় পৌরপিতা , বিধায়ক , সাংসদ , জেলা সভাধিপতি , পঞ্চায়েত ইত্যাদি সকলকে এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারেন ।

৫। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে আলোকিত স্থানে বসাতে পারেন ও যথাসম্ভব মৌখিক নির্দেশ দিতে পারেন ।

৬। ব্ল্যাকবোর্ড লেখার সময় শিক্ষক মুখে তা বলে নিতে পারেন । 

৭। দর্শন ব্যাতীত অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলিকে যথাসম্ভব কার্যকরী করে তোলার উপযুক্ত শিক্ষা সরঞ্জাম নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে পারেন ।

৮। বিদ্যালয়ে সহায়ক শিক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ করে ( যেমন ব্রেল বই , ব্রেল কাগজ , অ্যাবাকাস , সাদা লাঠি , অডিও টেপ রেকর্ডার ইত্যাদি ) Resource Room বা সম্পদ - শ্রেণিকক্ষ গড়ে তুলতে পারেন ।

৯। বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক , ক্রীড়া এবং সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের যুক্ত করতে ও অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন ।

১০। বিদ্যালয়ের সিঁড়ি , শ্রেণিকক্ষ , পানীয় জলের জায়গা , শৌচাগার ইত্যাদির অবস্থান সম্পর্কে সমস্যাযুক্ত শিশুকে অবহিত করতে পারেন ।

১১। শ্রেণিতে শিশুর অংশগ্রহণের সময়ে শিক্ষক শিশুর সদর্থক গুণাবলির দিকে গুরুত্ব দিয়ে তার করে অন্তঃশক্তির সর্বাত্মক বিকাশ ঘটাতে পারেন ।

১২। বিশেষ শিক্ষকের সঙ্গে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষার লক্ষ্য , পরিবেশ ও উপকরণ সম্পর্কে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ।

১৩। উদ্যোগী হয়ে বিদ্যালয়ে বাধাহীন পরিবেশ ( Barrier Free environment ) সৃষ্টিকে ত্বরান্বিত করতে পারেন ।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষায় পিতা-মাতার ভূমিকা

(১) বাবা-মাকে সেই ধরনের শিক্ষা দিতে হবে যাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুরা নিজের সহজে তার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।

(২) শিশুকে তার চিন্তাশক্তির স্বাধীন বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে।

(৩) শারীরিক, মানসিক দক্ষতা, প্রাক্ষোভিক ইত্যাদি সব ধরনের বিকাশ যাতে যথাযথভাবে ঘটে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

(৪) পিতা-মাতার ভূমিকা এমন হবে যা তার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তানের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করবে, জ্ঞানমূলক দক্ষতার বিকাশ ঘটায় এবং আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলবে।

 

শ্রেণিকক্ষ সজ্জা ও শিক্ষা উপকরণ :

 দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষ সজ্জার সময় সর্বপ্রথম তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার দিকে নজর দিতে হয় । এই পারিপার্শ্বিক অবস্থার অন্তর্গত প্রধান শর্তগুলি হল :

1.     যে বিদ্যালয়ে এই বিশেষ শ্রেণি স্থাপন করা হবে , সেটি যেন মাঝামাঝি অঞ্চলে অবস্থিত হয় , যাতে ওই অঞ্চলের সমস্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী সেখানে সহজে যেতে পারে ।

2.     সমমানের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা দরকার ।

3.      বিদ্যালয়ের যে শ্রেণিকক্ষে সর্বাপেক্ষা বেশি প্রাকৃতিক আলো - হাওয়া প্রবেশ করতে পারে সেখানেই এই শ্রেণি চালানো উচিত ।

4.     আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কথা বিবেচনা করে শ্রেণিকক্ষের আলোর উজ্জ্বলতা উপযুক্ত মানে রাখা প্রয়োজন । সরাসরি সূর্যালোক এবং অতি মৃদু আলো কোনোটিই এদের পক্ষে উপযুক্ত নয় । কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে । সেই সঙ্গে শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালের উজ্জ্বল রং ও জানালার উচ্চতা যথেষ্ট হওয়া উচিত ।

পারিপার্শ্বিক অবস্থার পাশাপাশি এক্ষেত্রে দ্বিতীয় যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিতে হয় সেটি হল বিভিন্ন উপকরণ ও উপাদানের সমৃদ্ধকরণ ।  দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শ্রেণিসজ্জায় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণগুলি নিম্নরূপ হবে :

1. চলমান ও পরিবর্তনযোগ্য টেবিল ব্যবহার করা প্রয়োজন যা শিক্ষার্থীর উচ্চতা , আলোর অবস্থান ইত্যাদির উপর নির্ভর করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরানো যায় ।

2.আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য কালো রংয়ের পরিবর্তে ধূসর বর্ণের চকবোর্ড ব্যবহার করতে হয় এবং আলোর প্রতিফলন যাতে কম হয় সেজন্য ক্রিম রংয়ের মোটা কাগজ ব্যবহার করতে হয় । সেই সঙ্গে এদের অপেক্ষাকৃত মোটা সিসের কাঠ পেনসিল ব্যবহার করতে দেওয়া হয় ।

3.টাইপ রাইটার ও ব্রেইলার হল শ্রেণিকক্ষের বিশেষ উপকরণ । আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা অপেক্ষাকৃত বড়ো মাপের টাইপ রাইটার ব্যবহার করে যার দ্বারা মুদ্রিত লেখা অনেক বড়ো হয় এবং পড়তে সুবিধা হয় । অপরপক্ষে , অন্ধ শিক্ষার্থীরা ব্রেইলের ভাষা লেখার জন্য ব্রেইলার টাইপ মেশিন ব্যবহার করতে পারে । এই ব্রেইলারে প্রধানত ছ - টি চাবি ( Key ) থাকে যা ব্রেইলের ছ - টি বিন্দুকে উপস্থাপন করে এবং ব্রেইল ভাষায় লিখে থাকে ।

4.যেহেতু দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা দৃষ্টিশক্তিকে পুরোপুরি শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারে না , তাই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকমহাশয়ের বক্তব্য বাণীগ্রাহী যন্ত্রের মাধ্যমে ধারণ করে থাকে এবং পাঠ্যাংশটির রেকর্ডেড বইও শ্রবণ করে থাকে ।

5.আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য পাঠ্যাংশ বা লিখিত উপকরণের অভিক্ষেপ বড়ো পর্দায় ফেলা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি বিবর্ধিত কাচ পড়াশোনার জন্য ব্যবহৃত হয় ।

 

 আরো পড়ুনঃ

 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষণের জন্য একজন শিক্ষকের যোগ্যতা ( Professional Competence of a teacher for teaching Visually Handicapped Children ) :

 স্বাভাবিক শিশুদের শিক্ষাদানের যোগ্যতা একজন শিক্ষকের অবশ্যই থাকতে হবে । বিশেষ শিক্ষার শিক্ষককে ব্যতিক্রমধর্মী শিশুদের শিক্ষাদানের জন্যে আরও দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়াতে হবে । এই পরিস্থিতিতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের একজন শিক্ষক হিসাবে নিম্নলিখিত বিষয়ে অবশ্যই দক্ষতা থাকতে হবে ।

1. ব্রেইলের ব্যবহার ( Use of Braille ) : দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ব্রেইল হল শিক্ষার আত্মাস্বরূপ । একজন শিক্ষকের Grade II ব্রেইলের বিষয়ে অগাধ জ্ঞান থাকবে । ব্রেইল শেখা ছাড়াও শিক্ষকের গাণিতিক ও রাসায়নিক ব্রেইল বিষয়ে জ্ঞান থাকবে ।

2.চলাফেরা , অবস্থান বিষয়ে প্রশিক্ষণ ( O & M Training ) : একজন দক্ষ শিক্ষকের Orientation ও Mobility বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকবে । এই ব্যাপারে কর্মসূচি ঠিক করার ক্ষমতা তার থাকবে ।

3.চোখের গঠনগত ও শারীরবৃত্তীয় জ্ঞান থাকবে ।

4.দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা বিষয়ে মূল ধারণা থাকবে । যেমন — স্পর্শ দ্বারা শেখা , সহায়কারী প্রযুক্তি , জাতীয় চিন্তাভাবনা , RCI- এর নিয়মকানুন প্রভৃতি ।

5.গণিত শিক্ষার প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার জানা থাকবে । যেমন --- অ্যাবাকাস ( Abacus ) , টেলর ফ্রেম ( Taylor Frame ) এবং অন্যান্য গাণিতিক যন্ত্রাংশ ।

 

Written By: Shahriar Tanzid Shaon

                              


 
আমি শাহরিয়ার তানজিদ শাওন। আমি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত আছি। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্লগে আর্টিকেল লিখতে ভালো লাগে। আলহামদুলিল্লা

 

 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.