টপোলজি কি? বাস টপোলজি| ট্রি টপোলজি| রিং টপোলজি| What is Topology ||

  আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো নেটওয়ার্ক টপোলজি সম্পর্কে। এই আর্টিকেলে সে টপিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো নিচে সূচিপত্র আকারে দেওয়া হলোঃ
১।নেটওয়ার্ক টপোলজি কি?
২। বাস টপোলজি
২। রিং টপোলজি
৩। স্টার টপোলজি
৪। ট্রি টপোলজি
৫। মেশ টপোলজি
৬। হাইব্রিড টপোলজি

 
What is Topology

নেটওয়ার্ক টপোলজি (Network Topology)

কোনো নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত কম্পিউটার সমূহ একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকার কৌশলকেই Network Topology বলা হয়।
এটি নেটওয়ার্কের ফিজিক্যাল ডিভাইস বা কম্পোনেন্ট। যেমন- ক্যাবল, পিসি, রাউটার ইত্যাদি যেভাবে নেটওয়ার্কে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে তাকে বলা হয় টপোলজি। নেটওয়ার্ক টপোলজি মূলত নেটওয়ার্কের ফিজিক্যাল লেআউট (Layout) করে থাকে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং-এর জন্য মূলত ছয় ধরনের টপোলজি ব্যবহৃত হয়।
যথাঃ

  1. বাস টপোলজি
  2. রিং টপোলজি 
  3. স্টার টপোলজি
  4. ট্রি টপোলজি
  5. মেশ টপোলজি 
  6. হাইব্রিড টপোলজি

 

বাস টপোলজি

 

যে টপোলজিতে একটি মূল তারের সাথে সবকটি ওয়ার্কস্টেশন বা কম্পিউটার সংযুক্ত থাকে তাকে বাস টপোলজি বলা হয়। বাস টপোলজির প্রধান ক্যাবলটিকে বলা হয় ব্যাকবোন (Backbone)। সিগন্যাল যখন ব্যাকবোনে চলাফেরা করে তখন শুধু প্রাপক কম্পিউটার সিগন্যাল গ্রহণ করে, বাকিরা একে অগ্রাহ্য করে। এ টপোলজি ছোট আকারের নেটওয়ার্কে ব্যবহার খুব সহজ, সতী ও এটি বিশ্বস্ত। এ সংগঠনে কোনো কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায় না। বাস টপোলজিতে একই নেটওয়ার্কে ভিন্ন ক্যাবল ব্যবহৃত হতে পারে।

 বাস টপোলজির সুবিধা:

১. এ টপোলজি ছোট আকারের নেটওয়ার্কে ব্যবহার খুব সহজ ও এটি বিশ্বস্ত ।
 ২. এ টপোলজিতে সবচেয়ে কম ক্যাবল প্রয়োজন হয়, ফলে এতে খরচও সাশ্রয় হয়।
৩. প্রয়োজনে রিপিটার ব্যবহার করে নেটওয়ার্কের ব্যাকবোন সম্প্রসারণ করা যায়।
৪. এ সংগঠনে কোনো কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায় না।
৫. এ সংগঠনে কোনো কম্পিউটার বা যন্ত্রপাতি যোগ করলে বা সরিয়ে নিলে পুরো নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ব্যাহত হয় না।

বাস টপোলজির অসুবিধা:

১. নেটওয়ার্কে কম্পিউটার সংখ্যা বেশি হলে ডেটা ট্রান্সমিশন বিঘ্নিত হয়।
২. ডেটা ট্রান্সমিশনের গতি কম।
৩. নেটওয়ার্কে সৃষ্ট সমস্যা নির্ণয় তুলনামূলক বেশ জটিল।
৪. মূল ক্যাবলের একটিমাত্র স্থানে সৃষ্ট ত্রুটি পুরো নেটওয়ার্ককে অচল করে দিতে পারে।

Related:কম্পিউটার সফটওয়্যার কি? কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কি?হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে পার্থক্য ||

রিং টপোলজি


 

রিং টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটার তার পার্শ্ববর্তী কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে। এভাবে রিংয়ের সর্বশেষ কম্পিউটারটি প্রথমটির সাথে যুক্ত থাকে। এ ব্যবস্থায় কোনো কম্পিউটার ডেটা পাঠালে তা বৃত্তাকার পথে কম্পিউটারগুলোর মধ্যে ঘুরতে থাকে যতক্ষণ না নির্দিষ্ট কম্পিউটার ডেটা গ্রহণ করে। এ ব্যবস্থায় কোনো কেন্দ্রীয় কম্পিউটার থাকে না। এতে প্রতিটি কম্পিউটারের গুরুত্ব সমান। রিং টপোলজিতে যেহেতু প্রতিটি কমপিউটার ধারাবাহিকভাবে বৃত্তাকারে সংযুক্ত থাকে তাই এক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের প্রথম কমপিউটারটি শেষ কমপিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে।

রিং টপোলজির সুবিধা:

১. এ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় কোন কম্পিউটার বা সার্ভারের প্রয়োজন হয় না।
২. নেটওয়ার্কে অবস্থিত প্রতিটি কম্পিউটারের গুরুত্ব সমান।
৩. নেটওয়ার্কে কম্পিউটার সংখ্যা বাড়লেও এর দক্ষতা খুব বেশি প্রভাবিত হয় না।

রিং টপোলজির অসুবিধা:

১. নেটওয়ার্কের একটিমাত্র কম্পিউটার সমস্যায় আক্রান্ত হলে পুরো নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে।
 ২. রিং টপোলজির নেটওয়ার্কে সমস্যা নিরূপণ বেশ জটিল।
৩. নেটওয়ার্কে কোনো কম্পিউটার যুক্ত করলে বা সরিয়ে নিলে তা পুরো নেটওয়ার্কের কার্যক্রমকে ব্যাহত করে।

Related:ডেটা বনাম তথ্য| তথ্য সাক্ষরতা কি?| |

স্টার টপোলজি


 

যে টপোলজি একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটার বা হোস্ট কম্পিউটারের সাথে অন্যান্য কম্পিউটার সংযুক্ত করে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে তাকে স্টার টপোলজি বলা হয়। এক্ষেত্রে একটি কম্পিউটার কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। এ সংগঠনে কোনো একটি কম্পিউটারে নষ্ট হয়ে গেলে বাকি নেটওয়ার্কে তার প্রভাব পড়ে না। খুব সহজেই সমস্যায় আক্রান্ত কম্পিউটারটি সরিয়ে নেয়া যায়। স্টার টপোলজি একটি বহুল ব্যবহৃত টপোলজি । স্টার টপোলজি নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নে সবচেয়ে জনপ্রিয় টপোলজি।

স্টার টপোলজির সুবিধা

দক্ষ সমস্যা সমাধান: বাস টপোলজির তুলনায় স্টার টপোলজিতে সমস্যা সমাধান বেশ দক্ষ। একটি বাস টপোলজিতে, ম্যানেজারকে তারের কিলোমিটার পরিদর্শন করতে হয়। একটি স্টার টপোলজিতে, সমস্ত স্টেশন কেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকে। অতএব, সমস্যা সমাধানের জন্য নেটওয়ার্ক প্রশাসককে একক স্টেশনে যেতে হবে।
নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ: স্টার টপোলজিতে জটিল নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ বৈশিষ্ট্যগুলি সহজেই প্রয়োগ করা যেতে পারে। স্টার টপোলজিতে করা যেকোনো পরিবর্তন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযোজিত হয়।
সীমিত ব্যর্থতা: যেহেতু প্রতিটি স্টেশন কেন্দ্রীয় হাবের সাথে নিজস্ব তারের সাথে সংযুক্ত, তাই একটি তারের ব্যর্থতা পুরো নেটওয়ার্ককে প্রভাবিত করবে না।
পরিচিত প্রযুক্তি: স্টার টপোলজি একটি পরিচিত প্রযুক্তি কারণ এর সরঞ্জামগুলি সাশ্রয়ী।
সহজে প্রসারণযোগ্য: হাবের খোলা পোর্টগুলিতে নতুন স্টেশন যোগ করা যায় বলে এটি সহজেই প্রসারণযোগ্য।
সাশ্রয়ী মূল্য: স্টার টপোলজি নেটওয়ার্কগুলি সাশ্রয়ী-কার্যকর কারণ এটি সস্তা কোক্সিয়াল তার ব্যবহার করে।
উচ্চ ডেটা গতি: এটি প্রায় 100Mbps ব্যান্ডউইথ সমর্থন করে। ইথারনেট 100BaseT হল অন্যতম জনপ্রিয় স্টার টপোলজি নেটওয়ার্ক।

স্টার টপোলজির অসুবিধা

ব্যর্থতার একটি কেন্দ্রীয় বিন্দু: যদি কেন্দ্রীয় হাব বা সুইচ নিচে চলে যায়, তাহলে সমস্ত সংযুক্ত নোড একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবে না।
কেবল: কখনও কখনও তারের রাউটিং কঠিন হয়ে পড়ে যখন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রাউটিং প্রয়োজন হয়।

Related:ই-গভর্নেন্স বলতে কী বোঝ এবং বাংলাদেশে ই-গভর্নেন্স| |

ট্রি টপোলজি

 


যে টপোলজিতে কম্পিউটারগুলো পরস্পরের সাথে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো বিন্যস্ত থাকে তাকে ট্রি টপোলজি বলা হয়। এ টপোলজিতে এক বা একাধিক স্তরের কম্পিউটার হোস্ট কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে। অর্থাৎ প্রথম স্তরের কম্পিউটারগুলো দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলোর হোস্ট হয়। একইভাবে দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলো তৃতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলোর হোস্ট হয় । অফিস ব্যবস্থাপনার কাজে এ নেটওয়ার্ক টপোলজি খুবই উপযোগী। শাখা-প্রশাখা সৃষ্টির মাধ্যমে ট্রি টপোলজির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা সহজ।

ট্রি টপোলজির সুবিধা

১.অফিস ব্যবস্থাপনার কাজে এ নেটওয়ার্ক টপোলজি খুবই উপযোগী।
২. শাখা-প্রশাখা সৃষ্টির মাধ্যমে ট্রি টপোলজির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা সহজ।
৩. নতুন কোনো নোড সংযোগ বা বাদ দিলে নেটওয়ার্কের স্বাভাবিক কাজকর্মের কোনো অসুবিধা হয় না।

ট্রি টপোলজির অসুবিধা

১. এ টপোলজি কিছুটা জটিল।
২. রুট বা সার্ভার কম্পিউটারে ত্রুটি দেখা দিলে ট্রি নেটওয়ার্কটি অচল হয়ে যায়।

মেশ টপোলজি

 


মেশ প্রযুক্তি হল নেটওয়ার্কের একটি বিন্যাস যেখানে কম্পিউটারগুলি বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় সংযোগের মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে। এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে একাধিক পথ রয়েছে। এটিতে সুইচ, হাব বা কোনও কেন্দ্রীয় কম্পিউটার নেই যা যোগাযোগের কেন্দ্রীয় বিন্দু হিসাবে কাজ করে। মেশ টপোলজি প্রধানত WAN বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহৃত হয় যেখানে যোগাযোগের ব্যর্থতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। মেশ টপোলজি প্রধানত বেতার নেটওয়ার্কের জন্য ব্যবহৃত হয়।।

মেশ টপোলজির সুবিধা:

নির্ভরযোগ্য: জাল টপোলজি নেটওয়ার্কগুলি খুব নির্ভরযোগ্য যে কোনও লিঙ্ক ভাঙ্গন সংযুক্ত কম্পিউটারগুলির মধ্যে যোগাযোগকে প্রভাবিত করবে না।

দ্রুত যোগাযোগ: নোডগুলির মধ্যে যোগাযোগ খুব দ্রুত হয়।

সহজতর পুনর্বিন্যাস:
নতুন ডিভাইস যোগ করা অন্য ডিভাইসের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত করবে না।

মেশ টপোলজির অসুবিধা

খরচ: একটি জাল টপোলজিতে অনেক সংখ্যক সংযুক্ত ডিভাইস থাকে যেমন রাউটার এবং অন্যান্য টপোলজির তুলনায় বেশি ট্রান্সমিশন মিডিয়া।
ব্যবস্থাপনা: মেশ টপোলজি নেটওয়ার্কগুলি খুব বড় এবং রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা করা খুব কঠিন। যদি নেটওয়ার্কটি সাবধানে নিরীক্ষণ না করা হয়, তাহলে যোগাযোগ লিঙ্কের ব্যর্থতা সনাক্ত করা যায় না।
দক্ষতা: এই টপোলজিতে, অপ্রয়োজনীয় সংযোগগুলি বেশি যা নেটওয়ার্কের দক্ষতা হ্রাস করে।

Related:দূর শিখন ও মিশ্র শিখন|৷

হাইব্রিড টপোলজি


 

বিভিন্ন টপোলজির সমন্বয় হল  হাইব্রিড টপোলজি  ।একটি হাইব্রিড টপোলজি হল ডেটা স্থানান্তর করার জন্য বিভিন্ন লিঙ্ক এবং নোডের মধ্যে একটি সংযোগ। যখন দুই বা ততোধিক ভিন্ন টপোলজি একসাথে যুক্ত করা হয় তখন তাকে হাইব্রিড টপোলজি বলা হয় এবং একই রকম টপোলজি একে অপরের সাথে যুক্ত হলে হাইব্রিড টপোলজি হবে না। উদাহরণস্বরূপ, যদি EXIM BANK ব্যাঙ্কের একটি শাখায় একটি রিং টপোলজি এবং EXIM BANK  ব্যাঙ্কের অন্য শাখায় বাস টপোলজি থাকে, তাহলে এই দুটি টপোলজিকে সংযুক্ত করার ফলে হাইব্রিড টপোলজি হবে৷

হাইব্রিড টপোলজির সুবিধা

নির্ভরযোগ্য: নেটওয়ার্কের কোনো অংশে ত্রুটি দেখা দিলে বাকি নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা প্রভাবিত হবে না।
মাপযোগ্য: বিদ্যমান নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা প্রভাবিত না করেই নতুন ডিভাইস যোগ করে নেটওয়ার্কের আকার সহজেই প্রসারিত করা যেতে পারে।
নমনীয়: এই টপোলজিটি খুব নমনীয় কারণ এটি সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ডিজাইন করা যেতে পারে।
কার্যকরী: হাইব্রিড টপোলজি খুবই কার্যকর কারণ এটি এমনভাবে ডিজাইন করা যেতে পারে যাতে নেটওয়ার্কের শক্তি সর্বাধিক হয় এবং নেটওয়ার্কের দুর্বলতা ন্যূনতম হয়।

হাইব্রিড টপোলজির অসুবিধা

জটিল নকশা: হাইব্রিড টপোলজির প্রধান ত্রুটি হল হাইব্রিড নেটওয়ার্কের নকশা। হাইব্রিড নেটওয়ার্কের আর্কিটেকচার ডিজাইন করা খুবই কঠিন।
ব্যয়বহুল হাব: হাইব্রিড টপোলজিতে ব্যবহৃত হাবগুলি অত্যন্ত ব্যয়বহুল কারণ এই হাবগুলি অন্যান্য টপোলজিতে ব্যবহৃত সাধারণ হাব থেকে আলাদা।
ব্যয়বহুল অবকাঠামো: একটি হাইব্রিড নেটওয়ার্কের জন্য প্রচুর ক্যাবলিং, নেটওয়ার্ক ডিভাইস ইত্যাদির প্রয়োজন হয় বলে অবকাঠামোর খরচ অনেক বেশি।

 

 Courtesy 

Information Collect From: HSC Intermediate ICT book.


লিখেছেনঃ জুবায়ের রশীদ তামিম

Tamim
Zubayer Rashid TamimUniversity of RajshahiIER (2019-20)Special StreamHometown: Sirajganj
 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.