বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ কৌশল || Teaching strategies for intellectual disabled Student ||

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ কৌশল || Teaching strategies for intellectual disabled Students ||





Teaching strategies for Intellectual Disabled Students


 কোনো ব্যক্তি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বা স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন বলতে আমরা কী বুঝি? 

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হল জীবনের শুরু থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতা, বাড়ন্ত বয়সে বুদ্ধি বিকাশের ধীরগতি, শিক্ষা গ্রহনে অক্ষমতা এবং সামাজিক ও আচরণগত সামঞ্জস্যতা সাধনের অভাব।

আমেরিকান এসোসিয়েশন অন মেন্টাল ডেফিসিয়েন্সি ( AAMD) ১৯৫৯ সালে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীতা বিষয়ক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। ওই পুস্তিকাতে প্রকাশিত সংঙ্গাটি ১৯৬১ সালে সংশোধন করে নিম্নলিখিত ভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়

" বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীতা বলতে সাধারণত গড় মানের চেয়ে কম বুদ্ধি নির্দেশ করে যা বাড়ন্ত বয়সে সূচিত হয় এবং ওই অবস্থানটি আচরণের অক্ষমতার সাথে সম্পর্কযুক্ত"

এর প্রায় বারো বছর পরে অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে AAMD কর্তৃক প্রদত্ত সংঙ্গাটি পুনঃসংশোধিত হয়- "বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীতা বলতে সাধারণত গড় বুদ্ধির চেয়ে সুস্পষ্টভাবে কম বুদ্ধি যা অভিযোজনমূলক আচরণের স্বল্পতার সাথে সংযুক্ত থাকে এবং অবস্থাটি বিকাশমূলক পর্যায়ে বা বাড়ন্ত বয়সে প্রকাশ পায়"

আরো পড়ুনঃ

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ কৌশল| Strategies for Hearing Impaired Children||

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষাকৌশল:

 (ক) স্বপ্ন ও মাঝারি মাত্রার ক্ষেত্রে -

এ ধরনের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির জন্য যে দক্ষতাগুলোর প্রয়োজন সেগুলোর বেশিরভাগই সংযুক্ত করা হয়। যেমন- 

•স্থির হয়ে বসা এবং শিক্ষকের প্রতি মনোযোগ দেয়া।

•শ্রবণ এবং দৃষ্টি উদ্দীসক পৃথকীকরণ। 

• নির্দেশ অনুসরণ করা।

• ভাষার বিকাশ।

•সূক্ষ্ম ও স্থূল পেশী সঞ্চালনের সমন্বয় সাধন। যেমন- পেন্সিল ধরা, কাঁচি দিয়ে কাটা ইত্যাদি।

•স্বাবলম্বী করে তোলা। যেমন-জুতার ফিতা বাঁধা, বোতাম লাগানো এবং খোলা, জিন লাগানো এবং খোলা, টয়লেটের ব্যবহার।

•সমবয়সীদের সাথে দলযুক্ত হয়ে মেলামেশা করা।

শিক্ষক শিশুকে ভাষা ও অন্যান্য ধারণার বিকাশে সহায়তা করেন এবং তাকে সামাজিকীকরণে সাহায্য করেন। প্রাথমিক পর্যায়ের শেষের দিকে শিশুকে কিছু লেখা-পড়া শেখানো হয় যাতে সে খবরের কাগজ, দরখাস্ত, বাজারের বিভিন্ন জিনিসের গায়ের ছাপ ইত্যাদি পড়তে ও লিখতে পারে। যেহেতু এই শিক্ষণ সময় সাপেক্ষ তাই এই শিক্ষণ দেয়া হয় বিশেষ শিক্ষা ক্লাসে।

(খ)গুরুতর মাত্রার ক্ষেত্রে -

• বয়স উপযোগী পাঠ্যক্রম ও উপকরণ।

• কর্তব্যমূলক কার্যক্রম শেখানো। যেমন- কাপড় পরা, খাওয়া, টয়লেট, ট্রেনিং ইত্যাদি।

• সমন্বিত কার্যক্রমে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া। এখানে বিশেষজ্ঞ হলেন স্পিচ থেরামিস্ট,অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট ইত্যাদি।

•স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের সাথে মেলামেশা। এটা শিশুকে সামাজিক করে ভুলতে সহায়তা করবে।

• শিশুর শিক্ষায় পরিবারকে সম্পৃক্ত করা। পরিবারের সম্পৃক্ততা শিশুর শিক্ষাকে ফলপ্রসূ করে।

আরো পড়ুনঃ

আচরণগত অক্ষম শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ কৌশল | Teaching strategies for Behavioural Disabled Students ||

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষণ পদ্ধতি ঃ

(১) সেগুইনের শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতি -

এডওয়ার্ড সেগুইন(১৮৪৬) পঞ্চেন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বিভিন্ন সহায়ক উপাদানের সাহায্যে পরিবেশ পরিচিতি, আকার, আকৃতি, ওজন ইত্যাদি গুণ অনুসারে বস্তুগুলির পৃথকীকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে বলেন।

(২) মন্তেসরির আত্ম-শিক্ষণ পদ্ধতি-

মাদাম মারিয়া মন্তেসরির শিশুশিক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষ অবদান আছে। তিনি বিভিন্ন ধরনের উকরণের সাহায্যে বস্তু সম্পর্কে ধারনা গড়ে তোলার কথা বলেন।

(৩) পিঁয়াজের জ্ঞানসংগঠন পদ্ধতি -

এ পদ্ধতিতে শিশুরা নিজেরাই শিক্ষাপদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করে জ্ঞান গঠন করবে এবং সমস্যা সমাধানের উপায় আবিষ্কার করবে।

(৪) নির্ণয়মূলক পদ্ধতি-

এই শিক্ষাপদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল শিশুর জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়াটিকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ করা। এর ফলে প্রক্রিয়া ও ফল লাভের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা যায় এবং একটি প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য কার্যকারিতা অনুমান করা যায়। অনগ্রসরতার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে কোন ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ কার্যকরী হবে এইভাবে চিহ্নিত করা যায়।

(৫) কর্ম বিশ্লেষণ পদ্ধতি -

একটি নির্দিষ্ট দক্ষতা শেখার জন্য দক্ষতার পর্যায়গুলি চিহ্নিত করা এবং শিশুকে প্রতিটি পর্যায় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে শিক্ষাদান করা এই পদ্ধতিকেই কর্ম বিশ্লেষণ বলা হয়। ১৯৫৩ সালে আর.বি মিলার প্রথম শিল্পক্ষেত্রে এটি প্রথম ব্যবহার করেন। পরে ১৯৬০ এর পরে বিশেষ শিক্ষায় বৌদ্ধিক কর্ম বিশ্লেষণের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কর্ম বিশ্লেষণের ৪টি পর্যায় আছে। 


বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকাঃ

•শিক্ষককে হতে হবে জীবন্ত আদর্শ' যাতে শিশুরা সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহী হয়।

•শুধুমাত্র মৌখিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করলে হবেনা, বরং যত বেশি সম্ভব বাস্তব উদাহরণ ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দিতে হবে। যেমন-যখন শিক্ষক পড়াবেন,'অ' তে অজগরটি আসছে তেড়ে,তখন শিক্ষক অজগর সাপ কীভাবে তেড়ে আসে সেটা নকল করে দেখাবেন। 

•শিশু যে সকল শব্দের সাথে পরিচিত শিক্ষাদানকালে শিক্ষক কেবল সেসকল শব্দগুলো ব্যবহার করবেন।

• শিশুদের দক্ষতা ও সামর্থ্যের দিকটি চিহ্নিত করবেন।

•শিক্ষাদানকালে যথেষ্ট পরিমান শিক্ষাদান উপকরণ ব্যবহার করতে হবে। উপকরণ গুলো উজ্জ্বল রঙের ও অল্পদামের হওয়া বাঞ্ছনীয়।

শিক্ষক কর্ম বিশ্লেষণ(Task analysis) পদ্ধতিতে প্রতিটি শিক্ষণীয় বিষয়কে ছোটছোট পরিমাপযোগ্য এককে ভাগ করে শিক্ষার্থীর সামনে পর্যায়ক্রমে উপস্থিত করবেন।

• শিক্ষক ধারণা গঠনের জন্য জানা থেকে অজানার দিকে, সহজ থেকে জটিলের দিকে, মূর্ত থেকে বিমূর্তের দিকে এগোতে পারেন।

• শিশুর পরিচিত অভিজ্ঞতা দিয়েই শিক্ষাদান শুরু করবেন।

•একটি শিক্ষণীয় দক্ষতা অর্জন করার পরও শিশুকে দিয়ে বারবার উক্ত দক্ষতাটিকে অনুশীলন করাতে হবে।

• এসব শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা খুবই কম। তাই একটানা বেশি সময় ধরে শেখানো যাবেনা।

• থেলার মাধ্যমে শিক্ষাদান করবেন। তাহলে বেশি কার্যকর হবে।

• শিশু যাতে পর্যায়ক্রমে এবং সুসংবদ্ধভাবে বিভিন্ন কাজ করতে পারে তার জন্য শিশুকে দক্ষতা অর্জনের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

• শিশু যাতে সাধারণভাবে জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলোকে অর্জন করতে এবং বিভিন্ন কর্মপরিবেশে সেগুলো ব্যবহার করতে পারে ।

আরো পড়ুনঃ

শিখন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিখন কৌশলসমূহ|Teaching strategies for learning Disabled Children|


Written By: Shahriar Tanzid Shaon

SHAON
আমি শাহরিয়ার তানজিদ শাওন। আমি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত আছি। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্লগে আর্টিকেল লিখতে ভালো লাগে। আলহামদুলিল্লা


কোন মন্তব্য নেই

Blogger থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.