শিশুর ভাষা বিকাশ || Language Development || শিশুর ভাষা বিকাশের তত্ত্ব || Part-2

শিশুর ভাষা বিকাশের তত্ত্ব -

১. আচরণবাদী তত্ত্ব – 

(Skinner, Conditioning Theory) এই তত্ত্ব অনুসারে ভাষার বিকাশ ঘটে অনুকরণ-এর ফলে। বড়রা যখন ছোটদের সঙ্গে কথা বলে, তখন শিশুরা তা অনুকরণ করতে চেষ্টা করে। যখন শিশুর উচ্চারণ করা শব্দটি বড়রা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনুমোদন (Reinforce) করে, তখন তা স্থায়ী আচরণে রূপান্তরিত হয়। শিশুদের সঙ্গে কথা বলার সময় সহজ ও শিশুদের উপযোগী ভাষা প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে শিশুদের কথা শেখা সুবিধাজনক হয়। কিন্তু অনেক গবেষনা সত্ত্বেও এই মতের সত্যতা নিশ্চিত ভাবে প্রমাণিত হয়নি। তাছাড়া এই মত অনুযায়ী বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গে ভাষার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায় না।

Posted on: 26 october,2022/By Shahriar Tanzid Shaon 

 

২. নোয়াম চমস্কির সহজাত ভাষা আত্তীকরণ প্রক্রিয়া-

 এই তত্ত্ব অনুসারে ভাষা ব্যবহার মানুষের একটি অনন্য ক্ষমতা। প্রত্যেক মানুষ জন্মগতভাবে বা জিনগতভাবে সহজাত ভাষা আয়ত্ত করার এক ধরনের কৌশল নিয়ে জন্মায়। সেইজন্য জন্মের পর থেকেই শিশুরা শব্দের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং অবিলম্বে অন্যদের বলা শব্দকে অন্য সমস্ত শব্দ থেকে বিচ্ছিন্ন করে শুনতে চেষ্টা করে এবং দ্রুত শিশুদের ভাষার দক্ষতা বিকাশ লাভ করে। তবে এই তত্ত্ব অনুযায়ী বৌদ্ধিক বিকাশ ও ভাষার বিকাশ প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত নয়।

 Related:   শিশুর ভাষা বিকাশ || Language Development || Part-1

৩. পিয়াজেঁর প্রজ্ঞামূলক বিকাশের তত্ত্ব - 

পিয়াজেঁর তাঁর তত্ত্বে দেখিয়েছেন, জন্মের পর থেকে উত্তর কৈশোর কাল পর্যন্ত কিভাবে চিন্তা ও ধারণার বিকাশ ঘটে। বাইরের জগৎকে জানা এবং বোঝার জন্য প্রতিটি শিশুর ব্যবহৃত কৌশল চারটি পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়। প্রথম দিকে মূর্ত বস্তু ও সক্রিয়তার ভিত্তিতে শুরু হয়ে ধাপে ধাপে শেষ পর্যন্ত যৌক্তিক চিন্তা শিশুকে বাইরের জগৎ সম্পর্কে ধারণা গঠন ও ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করে। ভাষা ও চিন্তা বিকাশ সমান্তরাল। ব্যক্তি যে ধারনার যৌক্তিক সংগঠন গড়ে তোলে, তার সঙ্গে ভাষার সম্পর্ক গভীর। সুতরাং পিয়াজেঁর তত্ত্ব অনুযায়ী শিশুর প্রজ্ঞামূলক বিকাশ তথা বৌদ্ধিক বিকাশ ভাষা বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত।

৪. ভাইগটস্কির সামাজিক বিকাশ তত্ত্ব-

ভাইগটস্কির মতে, প্রজ্ঞামূলক বিকাশ ঘটে বিশেষ একটি কৃষ্টির প্রেক্ষাপটে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে। প্রজ্ঞামূলক বিকাশের প্রাথমিক বিকাশ ঘটে সমাজায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং পরে তা ব্যক্তিগত প্রজ্ঞায় পরিণত হয়। যেহেতু ভাষা সামাজিক আদান-প্রদানের প্রধানতম বাহন এবং নানা কৃষ্টিভেদে এই আদান-প্রদানের রকমফের ঘটে, সেহেতু ভাষা প্রধানতম বাহন এবং নানা কৃষ্টিভেদে এই আদান-প্রদানের রকমফের ঘটে, সেহেতু ভাষা বিকাশের ক্ষেত্রেও কৃষ্টিগত ও ব্যক্তিগত তারতম্য হয়।

ভাইগটস্কির মতে, প্রথমত ভাষা শিশুর কাছে বিষয় যা শুধুমাত্র সামাজিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ক্রমশ ভাষা তার নিজের ব্যক্তিগত আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিজের মনে কথা বলার মাধ্যমে একটি বিশেষ হাতিয়ার হয়ে ওঠে। ক্রমশ এই আত্মবলম্বন নিজের মনে নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হতে থাকে। ক্রমশ আত্মকথন শিশুর চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটায়, কারণ শিশুর চিন্তা আর আত্মকথন প্রায় সমার্থক। এইভাবে সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে ভাষার মাধ্যমে শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশ

 

৫. মিথস্ক্রিয়া মূলক তত্ত্ব -

এই তত্ত্বের তাত্ত্বিকরা মনে করেন, ভাষা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে যে প্রতি সংকেত পাওয়া যায় তার ফলে শিশু তার স্মৃতিতে কথাটি তথ্য জারনের কৌশল (যেমন Rehearsal) প্রয়োগ করে সংরক্ষন করে এবং ধীরে ধীরে সমস্ত সংরক্ষিত ভাষা সংঘটিত হয়ে ভাষা ব্যবহারের ভিত্তি তৈরি করে।

মিথস্ক্রিয়া মূলক তত্ত্বের আর একটি মত, সামাজিক কথোপকথনের মাধ্যমে অর্থাৎ কথার সঙ্গে শিশুর প্রতিক্রিয়া এবং তার প্রতিক্রিয়ায় আরও কথা - এই ধারাবাহিকতায় ভাষার বিকাশ ঘটে। সুতরাং ভাষা সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সফল। এই কারণে স্বল্পভাষী মায়ের শিশুর চেয়ে যে মা শিশুর সঙ্গে বেশি কথা বলেন, তার ভাষার বিকাশ বেশি ঘটে। এই মতের সমর্থনে প্ৰমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি।

জাঁ পিয়াজেঁর রচিত " The Language and Thought of Child (1926) ও দ্বিতীয় বইটি লেভ ভাইগটস্কি রচিত "Thought and Language (1962)। পিয়াজেঁ ও ভাইগটস্কি উভয়েই শিশুর কার্যক্রম, মানসিকতা সম্পর্কে গবেষণা করেছেন, পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং শিশুর জ্ঞানীয় ও ভাষা উন্নয়ন সম্পর্কে তাদের বিশ্লেষণ প্রকল্পিত করেছেন। দুটি বই এ শিশুর ভাষার বিকাশের উপর একটি ধাতুগত ধারণাকে ব্যক্ত করে এবং দুটি বই একই শিক্ষাগত পরিকল্পনা ও বিনিময়ের উপর একটি দীর্ঘকাল ব্যাপী প্রভাব বিস্তৃত রয়েছে।

 

Related: Pre-natal Development(জন্মপূর্ববর্তী বিকাশ) 

 

 

Courtesy 

Information Collected From: Akter Banu Alpona (Mam) lecture.

Collected By:Shahriar Tanzid Shaon

SHAON

আমি শাহরিয়ার তানজিদ শাওন। আমি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত আছি। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্লগে আর্টিকেল লিখতে ভালো লাগে। আলহামদুলিল্লাহ🥰🌺