শিশুর ভাষা বিকাশ || Language Development || Part-1
একটি মানব শিশু জন্মের পর থেকে সময় অতিক্রম এর সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটতে থাকে। শিশুদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রকৃতি, বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক প্রমুখের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা লাভ করে এবং এর ফলে তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিকাশ গড়ে উঠতে শুরু করে।
Posted on: 26 october,2022/By Shahriar Tanzid Shaon
শিশুর মধ্যে -
-সংবেদন ও প্রত্যক্ষণের বিকাশ,
-ধারণার বিকাশ,
-যুক্তি শক্তির বিকাশ,
-স্মৃতি ও কল্পনার বিকাশ,
-চিন্তার বিকাশ,
-বুদ্ধি ও সৃজনশীলতার বিকাশ প্রভৃতি ঘটতে থাকে ।
এই সমস্ত বিকাশকেই একত্রে বৌদ্ধিক বিকাশ বলে।
Process of Language Development
পিয়াজেঁর মতে, জ্ঞানমূলক সংগঠনের একক স্কিমার বিস্তারই হল বৌদ্ধিক বিকাশ। একটি শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশে ভাষার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশের বিভিন্ন দিককে কীভাবে ভাষা প্রভাবিত করে তা উল্লেখ করা হল –
১. চিন্তা শক্তির বিকাশ - ভাষা ও চিন্তাশক্তি দুই হল পরিপূরক। ভাষার মাধ্যমে চিন্তা শক্তির বিকাশ হয়, আবার চিন্তা শক্তির মাধ্যমে ভাষার বিকাশ হয়।
২. কল্পনা শক্তির বিকাশ - শিশুর শিক্ষার যে কোনো দিক তা সে সাহিত্য হোক, কিংবা বিজ্ঞান হোক বা সমাজবিজ্ঞানী হোক, সমস্ত দিকেই একটি কল্পনার জগৎ আছে। শিক্ষার্থীর স্বাধীন কল্পনার জগৎকে তার নিজের মন দিয়ে গড়ে তুলতে চায়। এক্ষেত্রে ভাষা হচ্ছে তার অন্যতম প্রধান অবলম্বন।
৩. আত্মশক্তির বিকাশ - একটি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় তার আত্মশক্তির বিভিন্ন উপাদান গুলির বিকাশের মধ্যে দিয়ে। শিক্ষার্থী তার শিখনকে যথার্থ ভাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয় আত্মশক্তির দ্বারাই। তার মুক্ত চিন্তা, যুক্তিপূর্ণ ভাবনা ও তার উপস্থাপনাকে সার্থক করে তুলতে সক্ষম হয় ভাষার মাধ্যমেই।
৪. সৃজনশীলতার বিকাশ ও প্রতিষ্ঠা -শিশু শিক্ষার্থী ভাষার মাধ্যমেই তার নিজের মধ্যে সৃজনশীল ক্ষমতাকে জাগিয়ে তোলে, বিকশিত করে তোলে।
৫. শিক্ষার্থী শ্রবণ, কথন, পঠন ও লিখনের সহায়তা দান- মানুষের ভাব প্রকাশ ও শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল ভাষা। স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার্থীর নিকট ভাষাগত দক্ষতা অর্জনটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। শিক্ষার্থীর ভাষাগত দক্ষতার ক্ষেত্রে চারটিউল্লেখযোগ্য দিক হল - শ্রবণ, কথন, পঠন ও লিখন। নিয়মিতভাবে ভাষা চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করে থাকে। ভাষাগত দক্ষতার ক্ষেত্রে অনুসৃত নীতিগুলি এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হল:
i. শ্রবণ দক্ষতা অর্জন - কোনো বক্তব্য শোনার জন্য শিক্ষার্থীর ধৈর্য, আগ্রহ, মনোযোগ, আন্তরিকতা ও সহানুভূতি সহকারে শ্রবণ প্রয়োজন। বক্তাকে কথা বলার মধ্যে কোনো রূপ বাধা প্রদান না করার কর্তব্য। শিক্ষার্থী শ্রোতার মনোযোগের সঙ্গে সঙ্গে বক্তার বৃক্ততায় থাকতে হবে স্পষ্টতা, সংক্ষিপ্ততা, সহজ সরল উপস্থাপনা। শুদ্ধ ও স্পষ্ট উচ্চারণ, ধ্বনি সমষ্টির যথাযথ প্রয়োগ, উপযুক্ত শব্দ চয়ন ও শব্দ প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়।
ii. কথন দক্ষতা অর্জন - কথা বলার ক্ষেত্রেও দক্ষতা অর্জন শিক্ষার্থীর নিকট জরুরি। সাধারণভাবে চলিত ভাষায় সঠিকভাবে উচ্চারণের দ্বারা স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারা, ব্যক্তিগত অনুভূতি, অভিজ্ঞতা বা কোনো ঘটনার বর্ণনা দিতে পারা, অন্যের সঙ্গে সাবলীল ভাবে কথা বলা, নিজের ভাবনাকে অন্যের নিকট যথার্থভাবে তুলে ধরতে পারাকে কথা বলার দক্ষতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কথা বলার ক্ষমতা বা কথন দক্ষতা শিক্ষার্থীকে সহজেই সামাজিক পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হতে সাহায্য করে
।iii. পঠন দক্ষতা অর্জন: সহজ স্বচ্ছন্দভাবে পাঠের বিষয়বস্তুকে উপস্থাপিত করা বা সাবলীলভাবে পাঠ করতে পারাও শিক্ষার্থীর শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। পঠন দক্ষতা অর্জন বলতে বোঝায় শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তক বা অন্য কোনো লিখিত বিষয়কে শুদ্ধভাবে, স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারে, স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দ গতিতে আবৃত্তি করতে পারা, গঠিত বিষয়বস্তুকে সাধারণ শ্রবণ যোগ্য করে অন্যের নিকট প্রকাশ করতে পারা, পঠন দক্ষতা অর্জনের দ্বারা শিক্ষার্থী তার শিখনের কাজকে অনেক বেশি ত্বরান্বিত ও কার্যকরী করে তুলতে পারে।
iv. লিখন দক্ষতা অর্জন - শিখনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো লিখন দক্ষতার - অর্জন করা। লিখন দক্ষতা বলতে বোঝায় শুদ্ধভাবে, স্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন ভাবে লিখতে পারা সঠিক ভাবে বাক্যের নির্দিষ্ট স্থানে যতি চিহ্ন ব্যবহার করতে পারা ও পাঠ্যপুস্তকে ব্যবহৃত শব্দ ও বাক্যকে শুদ্ধ বানানে অথবা অন্য কোনো বিকল্প পরিচিতি শব্দ দিয়ে লিখতে পারা। শ্রুতি লিখনে স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠা লিখন দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়।
শিশুর ভাষা শিক্ষায় শিখন ও স্মৃতি:
শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশে ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং ভাষার বিকাশে স্মৃতি ও শিখনের গুরুত্ব অপরিসীম। শিশুরা বড়দেরকে অনুকরণ করে কথা বলতে চেষ্টা করে এবং ধীরে ধীরে একটি দুটি করে কথা বলতে শুরু করে।
শিশু জন্মের পর ভাষা শিক্ষালাভ করে। প্রতিটি শিশু তার মাতৃভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে, নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে ও সামাজিকভাবে সংযুক্ত হতে পারে। চার বছরের একটি শিশু তার ভাষাজাত ধ্বনির প্রতিফলন সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং তার ভাষার মাধ্যমেই সে তার বাস্তবকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এমনকি এও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যে, একটি তিন বা চার বছরের শিশু একই সঙ্গে দুটি বা তিনটি ভাষায় সমান সাবলীল, এমনকি তারা সেই ভাষা কোন কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে, সে সম্পর্কে সজ্ঞাত এবং বিভিন্ন ভাষাকে পৃথকীকরণ করার বিষয়ে সক্ষম।
Related: জন্ম-পরবর্তী বিকাশ || Post-natal Development ||
Courtesy
Information Collected From: Akter Banu Alpona (Mam) lecture.
Collected By:Shahriar Tanzid Shaon
![]() |
SHAON |
কোন মন্তব্য নেই