অতি শৈশব পূর্ববর্তী কাল || What is Infancy?

Infancy/ অতি শৈশব পূর্ববর্তী কাল (২ সপ্তাহ থেকে ২ বছর):

Infancy



এই সময় শিশুদের দৈহিক বিকাশ খুব দ্রুত হয়। মানসিক, ভাষাগত, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক বিকাশ কিছুটা ঘটে।

শারীরিক বিকাশ

 দৈহিক বিকাশ বলতে শিশুর দৈহিক ওজন বা উচ্চতা বৃদ্ধিকে বোঝায়। শিশুর জন্মের পর থেকে বিভিন্ন ধরনের দৈহিক পরিবর্তনের মধ্য দয়ে তার বিকাশ সম্পন্ন হয়। যেমন- ওজনগত পরিবর্তন - জন্মের মুহূর্তে শিশুর ওজন সাধারণত তিন কেজি হয়। এই ওজন পাঁচ মাসের মধ্যে বেড়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৬ কেজি হয়। এক বছরের মধ্যে বেড়ে তা তিনগুণ বা ৯ কেজি এবং দুই বছরের মধ্যে চারগুণ মানে ১২ কেজি হয়।

উচ্চতাগত পরিবর্তন -  

শিশুর উচ্চতা তার বংশগতির উপর নির্ভর করে। তবে শিশুর জন্মের সময় যে উচ্চতায় থাকে, তা প্রথম বছর ৫০% বেশি হয় এবং দুই বছরে তা বেড়ে ৭৫% হয়।

মাংসপেশি বৃদ্ধি - 

এই স্তরে শিশুর ওজন ও উচ্চতাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাংসপেশিরও দ্রুত বৃদ্ধি হয়। এই স্তরে প্রথমে শিশু কেবল মাথা নাড়তে, Sucking করতে পারে। এই স্তরে শেষে শিশু বসতে, দাঁড়াতে এবং হাঁটতে শেখে। শিশু ছয়মাস বয়সে বসতে শেখে। দশমাস বয়সে হামাগুড়ি দেয়। বারাতে মাস বয়সে নিজে নিজে দাঁড়াতে পারে এবং প্রায় আঠারাতে মাস বয়সে হাঁটতে পারে।

Related: Pre-natal Development(জন্মপূর্ববর্তী বিকাশ)

মানসিক বিকাশ

মানসিক বিকাশ বলতে শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার বা দৈহিক কার্যাবলী। শৈশবে শিশুর বিভিন্ন ধরনের মানসিক বিকাশের স্তর দেখা যায়। Paiget-র মতে, এই স্তরের বিকাশমূলক দিক প্রতিবর্ত ক্রিয়া জন্মের সময় শিশুর কিছু ইন্দ্রিয় সক্রিয় থাকে এবং কিছু দৈহিক কার্যাবলী সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। যেমন আঁকড়ে ধরা, চোষা ইত্যাদি। এই স্তরের শেষের দিকে স্কিমার বিকাশ ঘটে।

পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রিয়া- 

শৈশবে শিশুদের কোনো একটি আচরণ একইভাবে বারে বারে করতে দেখা যায়, যাকে পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রিয়া বলা হয়। এই ক্রিয়ায় কয়েক ধরনের হয়. 

(১ - ৪ মাস) এক থেকে চার মাস শিশুর নিজের শরীরের কোন অংশর সঙ্গে এই পুনরাবৃত্তি করে থাকে। যেমন আঙুল চোষা

ভাষা বিকাশ

ভাষাগত বিকাশ বলতে বোঝায় শিশুর ভাষার প্রতি জ্ঞান, স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের জ্ঞান, শব্দভাণ্ডার, স্পষ্টভাবে শব্দের উচ্চারণ এবং বাক্য গঠন করার ক্ষমতা। জন্ম থেকে শিশুর ভাষার বিকাশ বিভিন্ন স্তরে হয়ে থাকে.

শিশুর জন্মের পর দুই মাস বয়সের কাছাকাছি সময়ে এক ধরনের স্বরবর্ণের মতো শব্দ করতে শেখে। একে Cooing বলা হয়।

চার মাস বয়সের কাছাকাছি সময় শিশু স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণর মিশ্রণে এক ধরনের শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে। যেমন ব্যা-ব্যা-ব্যা-ব্যা ন্যা-ন্যা-ন্যা-ন্যা ইত্যাদি। একে Babling বলা হয়।

১০ থেকে ১২ মাস বয়সে শিশু শব্দ প্রথম উচ্চারণ করতে পারে। শিশু একটি শব্দ ও তার সাথে ইশারা দিয়ে তার মনের ভাব বোঝাতে পারে। যাকে Holophrase বলে।

১২ থেকে ১৮ বছর বয়সে শিশু স্পষ্টভাবে কোন শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। এই বয়সে শিশুর শব্দভান্ডার পঞ্চাশের বেশি হয়।

 ১৮ - ২৪ মাস বয়সে শিশুর শব্দ ভাণ্ডার বৃদ্ধি পেয়ে ২০০র কাছাকাছি পৌঁছায় এবং শিশু দুটি শব্দ ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। ডাকে Telegraphic speech বলা হয়।

প্রাক্ষোভিক বিকাশ

প্রাক্ষোভিক বিকাশ বলতে বোঝায় আবেগ পরিবর্তনের রূপকে। শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে জীবন বিকাশের প্রত্যেকটি ভরে প্রাক্ষোভিক বিকাশ ঘটে। Watson এর মতে, মানুষ জন্মের সময় কেবল তিন ধরনের প্রক্ষোভ রাগ, ভয়, ভালোবাসা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই স্তরের শেষ পর্যায়ে আরো কিছু প্রক্ষোভ যেমন- হিংসা, ঘৃণা, আনন্দ, খুশি ইত্যাদির প্রকাশ ঘটে।

শিশুর প্রাক্ষোভিক বিকাশ তিনমাস বয়সে শুরু হয়। ওই সময় শিশু আনন্দ এবং অস্বাচ্ছন্দা অনুভব করতে শেখে। দেখা গেছে ছয় মাস বয়সে আনন্দের প্রক্ষোভটি উচ্ছ্বাসে এবং অস্বাচ্ছন্দ্য প্রক্ষোভটি বিরক্তিতে পরিণত হয়। শিশুর প্রক্ষোভের তীব্রতা খুব বেশি, স্থায়িত্ব খুব কমা প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে শিশুরা অক্ষম।

Related:দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা কি? দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতার শ্রেণীবিভাগ এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার কারণগুলো কি কি||

সামাজিক বিকাশ 

সামাজিক বিকাশ  বলতে গৃহ ও পরিবেশের তথা সমাজের সাথে মানিয়ে নেওয়াকে বোঝায়। শৈশবে শিশুর মধ্যে কিছুটা সামাজিক বিকাশ ঘটতে দেখা যায়। যেমন, এরিকসনের মতানুসারে

শৈশবে (০-১ বছর পর্যন্ত) শিশুর মধ্যে এক ধরনের বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। শিশুর উপযুক্ত যত্ন, পরিচর্যা ও ভালোবাসা পেলে তার মধ্যে বিশ্বাস ও নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়, যা তাকে পরিবারের বাইরের পরিবেশেও সামঞ্জস্য বিধানে সাহায্য করে। নতুবা শিশুর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়, তার ফলে সামাজিক অসঙ্গতি হতে দেখা যায়।

১-২ বছরের শিশুর মধ্যে স্বাধীনতা ও লজ্জার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এই স্তরে শিশু নিজের মতো করে পরিবেশ পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারলে সে স্বাধীনচেতা ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে। তা না হলে তার মধ্যে সন্দেহ বা লজ্জার অনুভূতি তৈরি হয় এবং শিশুর স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।
জন্মাবার পর শিশু সম্পূর্ণ আত্মকেন্দ্রিক থাকে। এক মাসের শিশুরা কাছাকাছি থাকা বয়স্কদের সম্পর্কে সচেতন হয়। দুমাস বয়সে হাসির দ্বারা প্রতিক্রিয়া করে। মাকে চিনতে পারে। তিন মাস বয়সে দেখা যায়, শিশুর সঙ্গে কেউ কথা বললে শিশু কান্না থামায় আর চলে গেলে কাঁদো পাঁচ-ছয় মাসে আদর করা ও বকাবকির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে। নতুন লাগে ককে চিনতে পারে। তার কাছে যেতে চায় না। আট-নয় মাসে বয়স্কদের কথা অনুকরণ করে।

নৈতিক বিকাশ

নৈতিক বিকাশ বলতে বোঝায় শিশুর কোন নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে উচিত-অনুচিত বিচার করার ক্ষমতাকে। নৈতিক বিকাশ এই সময় একেবারে ঘটেনা।

Related: যোগাযোগ বৈকল্য | যোগাযোগ বৈকল্যের লক্ষণসমূহ এবং কারণসমূহ |
                 

Courtesy 

Information Collected From: Akter Banu Alpona (Mam) lecture

 


Collected By:Shahriar Tanzid Shaon

SHAON
আমি শাহরিয়ার তানজিদ শাওন। আমি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত আছি। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্লগে আর্টিকেল লিখতে ভালো লাগে। আলহামদুলিল্লাহ🥰🌺



 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.