শিশুর ভাষার বিকাশ ও ত্রুটিপূর্ণ ভাষা || Language Development || শিশুর ভাষা বিকাশের তত্ত্ব || Part-3


শিশুর ভাষা বিকাশের উপাদান:

ভাষার বিকাশ হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অতি শৈশবকাল থেকে শিশু ভাষার মাধ্যমে অন্যের কথা বুঝতে এবং যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। জন্মের পর থেকে পাঁচ বৎসর বয়স পর্যন্ত শিশুর ভাষা দ্রুত বিকাশ লাভ করে। ভাষার বিকাশ নির্ভর করে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ও ব্রেনের পরিপক্কতা ও পরিবেশের উপর। পরিবারের সদস্যরা শিশুর সাথে কথা বললে ভাষার বিকাশ দ্রুত হয়। এছাড়া -মানসিক ও বোধশক্তির বিকাশ যত দ্রুত হবে, ভাষার বিকাশ তত দ্রুত হবে।

Posted on: 26 october,2022/By Shahriar Tanzid Shaon 

 

 

শিশুর ভাষার বিকাশ ও ত্রুটিপূর্ণ ভাষা ||


 

 সঞ্চালন দক্ষতার বিকাশের সাথে ভাষার বিকাশ জড়িত। তাই শিশুর সঞ্চালনের বিকাশ ত্রুটিপূর্ণ হলে ভাষার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। শিশু যতবেশি জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করবে, ততবেশি শব্দ শিখবে, ভাষার বিকাশ হবে.শিশুরা বার বার চেষ্টার মাধ্যমে ভাষা শেখে । যেমন - মমম বললে বাবা-মা 'মা' বলছে বলে খুশি হয়। ফলে ঐ শব্দটা বার বার বলে। এভাবে একে একে শব্দ শেখে। তবে অনেক শব্দ আছে যা শিশুরা কোন পরষ্কার ছাড়াই শেখে। সেটা কেন হয়। চমস্কির মতে,ভাষা বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়

1. প্রাক বাচনিক পর্বে শিশুরা কান্না, কুজন/কলকাকলি, অঙ্গভঙ্গি ও আকার ইঙ্গিতের মাধ্যমে ভাষার প্রকাশ করে থাকে।

2. বাচনিক পর্বে শিশুরা শব্দ উচ্চারণ, এক শব্দ, দুই শব্দ যোগে বাক্য গঠনের মাধ্যমে ভাষার প্রকাশ করে।

 

 Related:   শিশুর ভাষা বিকাশ || Language Development || Part-1

 

এক শব্দ পর্যায়:  

প্রথম শব্দ কথা বলা শেখার পূর্বে শিশুরা সাধারণত কান্না, হাসি ও শরীর নড়াচড়ার মাধ্যমে (মাকে দেখে হাতপা নাড়ে। পরে রাগ, অভিমান, আনন্দ, আগ্রহ ইত্যাদি প্রকাশ করে) অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। সাধারণত ১ বছর বয়সে শিশুরা প্রথম শব্দ বলে। এ পর্যায়কে মনোবিজ্ঞানীরা "এক শব্দ পর্যায়" বলেন। পরবর্তী ৩/৪ মাসে ১০ টি শব্দ শেখে। ২০ মাসে প্রায় ৫০টি শব্দ শেখে। এ সময় শিশুরা মাত্র একটি শব্দ দিয়ে ধারণা বা বিষয়কে বোঝায়। আবার ভিন্ন ভিন্ন বিষয় বোঝাতে একই শব্দ ব্যবহার করে। যেমন - সব গোল বস্তুকে বল বলে।

দুই শব্দ পর্যায়: প্রথম বাক্য দেড় বছরে দুই শব্দ বিশিষ্ট বাক্য বলে। মা-দুধ, বাবা বই, মা নাই। ক্রমে শব্দ সংখ্যা বাড়ে বড়দের সহযোগিতায় ভুল শুধরে যায় এবং ভাষার বিকাশ হয়।

একই নিয়ম বার বার প্রয়োগ: 

ব্যাকরণ শিখন; এ স্তরে বাক্য গঠণের পাশাপাশি ব্যাকরণ শেখে। তবে সবসময় সঠিক হয়না।

আত্মকেন্দ্রিকতা: শব্দ ভাণ্ডার গঠন ২ থেকে ৪ বছরে খুবব দ্রুত নতুন নতুন শব্দ শেখে। প্রতি ৬ মাসে শব্দ ভাণ্ডার দ্বিগুণ হে যায়। নতুন শব্দ তৈরি করে আনন্দ পায়। নিজে শব্দ সৃষ্টি করে। যেমন - তোয়া। নার্সারি শিশুরা নালিশ, সমালোচনা, অনুকরণ করে, প্রশ্নোত্তর, সামাজিক প্রশংসা ও তথ্য সংগ্রহে মাধ্যমে ভাষার বিকাশ ঘটায়। ভাষা নিয়ে খেলে। ৫/৬ বছরে মাতৃভাষার মৌলিক বিষয় বিষয়গুলো আয়ত্ত করে ফেলে আত্মকেন্দ্রিক বলে আপনমনে খেলা বা কাজের সময় নিজের সাথে নিজেই কথা বলে।

 Related: শিশুর ভাষা বিকাশ || Language Development || শিশুর ভাষা বিকাশের তত্ত্ব || Part-2

জন্মের পর ১ম তিনমাস

-মায়ের ভয়েস সনাক্ত করতে পারে।-বিভিন্ন ধরনের কান্নার মাধ্যমে বিভিন্ন চাহিদা প্রকাশ করে।

তিন থেকে ছয় মাস

-যে কথা বলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। - আকার ইঙ্গিতে যোগাযোগ রক্ষা করে।

০৬ মাস থেকে ০৯ মাস

-নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয়।-বিভিন্ন ধরনের শব্দ করে। দা-দা, না-না বলে। শিশু ১২ ধরনের Cooing / Bubling/ কলকুজন করে।

৯ থেকে ১২ মাস

-অন্যের কথা শুনে।

-সাধারণ আদেশ বুঝতে পারে। হ্যাঁ ও না শব্দের অর্থ বোঝে।

১২ থেকে ১৫ মাস

নির্দেশনা বোঝে।

-অঙ্গভঙ্গি ও শব্দ করে চাহিদা প্রকাশ করে।

১৫ থেকে ১৮ মাস

- সঠিক শব্দ ব্যবহার করতে পারে।

-ঠান্ডা, গরম, উপর, নিচ বুঝতে পারে।

১৮ মাস থেকে ২ বছর -

-তিন শব্দের বাক্য বলতে পারে।

-ছড়া ও গান করে।

২ থেকে ৩ বছর

-৩-৫ শব্দের বাক্য বলতে পারে

-শরীরের অংশ, রং, খেলনা, মানুষ ও বস্তুর নাম বলতে পারে।

- প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।

৩ থেকে ৪ বৎসর

-অন্যের সাথে কথোপকথন করতে পারে।

- অন্যকে নানা ধরনের প্রশ্ন করে।

-গল্প বলতে পারে।

৩ থেকে ৫ বৎসর

-৬ থেকে ৮ শব্দযোগ বাক্য বলতে পারে।

-কোন বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখতে পারে।

Defective Speech and Remedies

ত্রুটিপূর্ণ ভাষাঃ 

সাধারণভাবে উচ্চারণের ত্রুটির জন্য ভাষাকে ত্রুটিপূর্ণ ভাষা বলা হয়। কিন্তু যেকোনো রকম অশুদ্ধ কথাই ত্রুটিপূর্ণ ভাষা। শিশুকালে শিশুদের ভাষা ব্যবহারে কিছু ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এর জন্য সুষ্ঠ পরিচালনা আবশ্যক। শিশুকালে ভাষার ত্রুটিকে তিন ভাবে ভাগ করা যায়।

১. শব্দার্থ ত্রুটি

২. উচ্চারণের ত্রুটি

৩.বাক্য কাঠামোতে ত্রুটি।

শব্দার্থ ত্রুটি:

কিছু শব্দ রয়েছে যা উচ্চারণ একই কিন্তু অর্থ ভিন্ন। (যেমন- পড়া, পরা

উচ্চারণের ত্রুটি:

ভুল কথা (যেমন -জুতাকে তোয়া, পানিকে মাম, কলেভার্সিটি)

বিশৃঙ্খল কথা (যেমন - চাঁদ নিব)

আধো আধো কথা (যেমন-বালো চেলে, আয়ু ভর্তা)

অস্পষ্ট কথা (যেমন -সেদিন যেটা খেয়েছিলাম সেটা দাও)

তোতলামী

অসামঞ্জস্যপূর্ণ কথা (যেমন -আর কোনদিন ওর সাথে খেলব না। একটু পরেই বলবে, ও, ভালো)

আঞ্চলিক কথা

বাক্য কাঠামোতে ত্রুটি: 

 সঠিকভাবে সর্বনাম (তুমি খাব), ক্ৰয়া (আমরা ঘুমাব, আমি যাবে), কাল (গতকাল যাব) ও বচনের ব্যবহার না করেই কথা বলে।

 Related: শিশুর প্রারম্ভিক শৈশব || What is early childhood?

Remedies

শিশুর সুষ্ঠু মানসিক, সামাজিক, আবেগিক বিকাশের জন্য ভাষার সঠিক উচ্চারণ ও প্রয়োগ আবশ্যক। ভাষাগত ত্রুটিতে ভুগতে থাকা শিশুরা সাধারণত মা ও বাবার কাছে থাকতেই বেশী পছন্দ করে। তাই এই ক্ষেত্রে মা-বাবাই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন -

-স্পষ্ট ও সঠিক উচ্চারণে কথা বলতে হবে,

- সঠিক বাক্যগঠণ করতে হবে,

-শিশুকে কথা বলার বা যোগাযোগের সুযোগ দিতে হবে, -নতুন শব্দের অর্থ বুঝিয়ে দিতে হবে,

-কথা শুনে অনুকরণ করার সুযোগ দিতে হবে,

-খুব দ্রুত বা খুব ধীরে কথা বলা যাবেনা,

-ভুল উচ্চারণ শুধরে দিতে হবে,

- গালি দিলে সেটা খারাপ তা বোঝাতে হবে। নাহলে শিশুর শব্দভাণ্ডারে বাজে শব্দ জমা হবে-ভুল উচ্চারণ শুধরে দিতে হবে,

-কথার অর্থের সাথে গলার স্বর ও মুখভঙ্গি বা অঙ্গভঙ্গি করে বোঝাতে হবে। যেমন - বিশাআআল বড় হাতি ।

এছাড়াও স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ থেরাপি এবং মা বাবার সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে একজন ভাষা ত্রুটিপূর্ণ শিশুর স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে আনা অনেকটাই সম্ভব।

 

Courtesy 

Information Collected From: Akter Banu Alpona (Mam) lecture.



Collected By:Shahriar Tanzid Shaon

SHAON
আমি শাহরিয়ার তানজিদ শাওন। আমি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত আছি। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্লগে আর্টিকেল লিখতে ভালো লাগে। আলহামদুলিল্লাহ🥰🌺

 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.