প্রকৃতিবাদ (Naturalism) ও শিক্ষা ||

 প্রকৃতিবাদ (Naturalism)

প্রকৃতিবাদ অনুসারে প্রকৃতিই (Nature) আসল। প্রকৃতিই বাস্তব সত্তা আর সব মিথ্যা। প্রকৃতিবাদকে অনেকে ভাববাদের ঠিক বিপরীত মতবাদ বলে মনে করেন। প্রকৃতিবাদী দর্শনে পরস্পর বিরোধী বহু চিন্তাধারা থাকলেও তারা নিম্নলিখিত বিষয়ে একমত।

 Posted on: 26 october,2022/By Shahriar Tanzid Shaon


 

প্রকৃতিবাদ অনুসারে দৃশ্যমান জগতই সত্য আর সব মিথ্যা। প্রকৃতিবাদীরা জগতের সব কিছুকেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীতে ব্যাখ্যা করেছেন। প্রাকৃতিক কোন ঘটনাই আকস্মিকভাবে ঘটে না। বিশ্ব প্রকৃতি কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলে। প্রাকৃতিক সকল ঘটনা সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী ঘটে। মানুষ প্রকৃতির অংশ। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই মানব জীবনের রীতি-নীতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। মানুষ প্রাকৃতিক নিয়মের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। সমাজের সবকিছুই কৃত্রিম। তাই তারা বলেন ‘প্রকৃতির মধ্যে ফিরে যাও' (Go back to nature)। সৃষ্টিকর্তা সবকিছুকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন, মানুষ সেগুলিকে খারাপ করেছে।

প্রকৃতিবাদী শিক্ষাদর্শন:

 প্রকৃতিবাদ শিক্ষাক্ষেত্রকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এই দার্শনিক চিন্তা প্রকৃতিবাদী শিক্ষাদর্শন নামে পরিচিতি। শিক্ষাদর্শনের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর প্রকৃতিকে বিনা বাঁধায় পূর্ণ পরিস্ফুটিত হতে দেওয়া। শিক্ষার অর্থ হল শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক বিকাশে সাহায্য করা। শিক্ষার্থীর মন, শক্তি, আবেগ, ইচ্ছা যখন কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বিকশিত হতে পারে তখনই শিক্ষা লাভ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যাবে। এরিস্টটল, স্পেন্সার, পেস্তালোজী (Pestalozzi), রুশো, রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতিবাদী শিক্ষা দার্শনিক। এদের মধ্যে রুশো হলেন চরমপন্থী।

প্রকৃতিবাদীরা গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁদের মতে, শিক্ষার্থীর বিকাশ ও বৃদ্ধি যেহেতু প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া সেহেতু তার শিক্ষা যদি প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক পথে অগ্রসর না হয়ে কৃত্রিম উপায়ে অগ্রসর হয় তাহলে সে শিক্ষা হবে ত্রুটিপূর্ণ । শিক্ষার বৃত্তিগুলোর স্বাভাবিক বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করাই শিক্ষার আদর্শ। শুধু যান্ত্রিকভাবে পড়া মুখস্ত করে তার পূনরুৎপাদন করা প্রকৃত শিক্ষা নয়। শিক্ষার্থীকে খেলা-ধূলা ও বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিধি নিষেধ শিক্ষার্থীর শিক্ষাব্যবস্থায় এক প্রধান অন্তরায়। শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর সহজাত বৃত্তি, তার আবেগ, ইচ্ছা, কামনা প্রভৃতি প্রকাশের সুযোগ থাকতে হবে।


Related: জোহান ফ্রেডরিক হার্বার্ট ও তার শিক্ষা দর্শন ||

প্রকৃতিবাদ অনুসারে শিক্ষার লক্ষ্য

প্রকৃতিবাদী শিক্ষা দার্শনিকরা শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে বিভিন্ন আদর্শের নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের মূলকথাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:

পরিবেশের সাথে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ সঙ্গতি বিধান: শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হবে পরিবেশের সাথে শিক্ষার্থীর সামঞ্জস্য বিধান করতে শেখানো। শিক্ষা হবে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া। পরিবেশের সাথে শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হবে সৌহার্দ্য পূর্ণ ।

আত্ম-সংরক্ষণ (Self preservation) : শিক্ষার লক্ষ্য হল আত্ম-সংরক্ষণ । জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে অস্তিত্ব রক্ষার উপযোগী করে শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলা শিক্ষার লক্ষ্য

আত্ম-প্রকাশনা (Self expression) : শিক্ষার্থীর আত্মপ্রকাশ বা আত্মবিকাশে সহায়তা করা শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। শিক্ষার্থী তার নিজের প্রকৃতি অনুযায়ী বিকাশ লাভ করবে। সমাজের কোন প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণ তার উপর থাকবে না। শিক্ষার্থীকে তার সামর্থ্য, ইচ্ছা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেওয়াই শিক্ষার লক্ষ্য। কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীকে তার স্বাভাবিক বিকাশে বাঁধা প্রদান করে।

মানব উন্নয়নঃ শিক্ষা দ্বারা মানব জাতির উন্নতি হয়। বিবর্তনের ধারায় মানুষের ক্রমোন্নতিই শিক্ষার লক্ষ্য। প্রত্যেক প্রজন্মের ভাল ভাল সামাজিক গুণগুলো রক্ষা করে পরিবর্তিত আকারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া শিক্ষার লক্ষ্য।

ভবিষ্যতের দীর্ঘস্থায়ী সুখ লাভ: ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী যাতে দীর্ঘস্থায়ী সুখ লাভ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার কথা বলেছেন প্রকৃতিবাদী শিক্ষা দার্শনিকরা। শিক্ষার্থীর বর্তমানের শিক্ষা এমন হবে যেন সে ভবিষ্যতে দীর্ঘস্থায়ী সুখের অধিকারী হতে পারে ।

প্রবৃত্তির উর্দ্ধমুখীতা: শিক্ষার্থীর প্রবৃত্তির উদ্যমকে উর্দ্ধমুখী, সুসংহত ও সুসংবদ্ধ করে ভিন্ন পথে পরিচালনা করা শিক্ষার মূল লক্ষ্য। শিক্ষার লক্ষ্য এমন হবে যাতে শিক্ষার্থীর সহজাত প্রবৃত্তিগুলো পরস্পর বিরুদ্ধ না থেকে সহযোগী ভাবে কাজ করে তাকে পূর্ণ শক্তির অধিকারী করে তোলে।

Related:জোহান হেনরিক পেস্টালজি ও তার শিক্ষাদর্শন।

প্রকৃতিবাদ অনুসারে পাঠ্যক্রমঃ

প্রকৃতিবাদীরা নির্দিষ্ট কোন পাঠ্যক্রমের পক্ষপাতী নন। শিক্ষার্থী তার প্রকৃতি ও চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যক্রম ঠিক করে নেবে। সে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। প্রকৃতিবাদী শিক্ষাদার্শনিকরা এ কারণে মানবিক বিষয়ের চেয়ে প্রকৃতির সাথে যেসব বিষয় সামঞ্জস্যপূর্ণ সেসব বিষয় পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন । প্রকৃতিবাদ অনুযায়ী পাঠ্যক্রম হবে নিম্নরূপ:


  1. প্রকৃতির সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয় যেমন- পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, উদ্যান রচনা, কৃষিবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এসব বিষয় বোঝার জন্য প্রকৃতিবাদীরা ভাষা ও গণিতের প্রয়োজনীয়তাও স্বীকার করেছেন।
  2. কৃষ্টিমূলক বা মানবধর্মী বিষয়গুলো যেমন- সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা ইত্যাদির বদলে বিজ্ঞানমুখী শিক্ষাকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন প্রকৃতিবাদীরা ।
  3. মানবজীবনের বর্তমান অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে প্রকৃতিবাদীরা বলেন বর্তমানকে বুঝতে হলে মানব জাতির অতীত ইতিহাসকে জানা দরকার। অতীতের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা বর্তমানকে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে এবং মানব মনে ভবিষ্যৎ কাজের অন্তর্দৃষ্টি সৃষ্টি করে। তাই তাঁরা ইতিহাসকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষপাতী।
  4. প্রকৃতিবাদ মানুষের আধ্যাত্মিক প্রকৃতিকে গুরুত্ব দেয় না। সে জন্য পাঠ্যক্রমে ধর্ম শিক্ষার কোন স্থান নাই। এ মতবাদ অনুসারে শিক্ষার্থী মুক্ত। তাকে প্রকৃতভাবে মুক্ত ও স্বাধীন হতে হলে তার যুক্তি-বৃত্তির বিকাশ করতে হবে। সুতরাং শিক্ষার্থীর যৌক্তিক ক্ষমতা বিকাশে সহায়ক বিষয়গুলো পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।


প্রকৃতিবাদ অনুসারে শিক্ষণ পদ্ধতি

শিক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রকৃতিবাদীরা অভিনব মতামত পোষণ করেছেন। তাঁদের মতে শিক্ষণে শিক্ষক বা পাঠ্যপুস্তকের বিশেষ প্রয়োজন নাই। প্রকৃতিবাদ অনুযায়ী শিক্ষণ পদ্ধতি হবে নিম্নরূপ:

  1. শিক্ষার্থীকে বাস্তব অভিজ্ঞতার সাহায্যে শিক্ষা দিতে হবে। বই পড়ার বদলে শিক্ষার্থী অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ করবে।
  2. শিক্ষার্থীর কাজে তাকে স্বাধীনতা দিতে হবে। সে হাতে কলমে নিজে কাজ করে শিখবে। তাকে বাইরে থেকে কোন কিছু শেখাবার প্রয়োজন নাই।
  3. শিক্ষার্থীরা গবেষণাগারে বিজ্ঞান শিখবে, অথবা যেখানে সম্ভব সেখানে বাইরের প্রকৃতির মধ্যে গিয়ে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব শেখার চেষ্টা করবে। জ্যামিতি শিখবে খেলার মাঠ বা জমির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ মেপে। অনুরূপভাবে ভূগোল শিখবে শিক্ষা সফরের মাধ্যমে।
  4. নৈতিক শিক্ষা, নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে বক্তৃতা না দিয়ে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষাদানের পক্ষপাতী প্রকৃতিবাদীরা ।
  5. প্রকৃতিবাদীরা ক্রীড়াচ্ছলে শিক্ষাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। কারণ সহজ খেলার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী তার প্রকৃতিকে প্রকাশ করে এবং কোন্ ধারায় সে বিকশিত হবে তার ইঙ্গিত তার খেলা থেকে পাওয়া যায়। খেলার ছলে শিক্ষার্থী নানা সৃজনী কাজে রত হয়। 
  6. বয়স্কাউট, বাগান করা, শিক্ষা সফর, শরীরচর্চা ইত্যাদি বিষয়ের উপর প্রকৃতিবাদীরা শিক্ষণে গুরুত্বারোপ করেছেন।
  7. আনন্দ ও বিনোদনের মাধ্যমে শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষককে শিশুর মতো হতে হবে। তার শিশুসুলভ কৌতুকবোধ থাকতে হবে, যাতে শিশুদের সাথে মিশতে পারেন এবং তাদের মজায় যোগ দিতে পারেন ।


প্রকৃতিবাদ অনুসারে শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য

প্রকৃতিবাদীরা শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছেন। শিক্ষালয়, শিক্ষক, পাঠ্যক্রম, পাঠদান পদ্ধতি এসবের চেয়ে শিক্ষার্থীর গুরুত্ব অনেক বেশি। শিক্ষার্থীর নিজস্ব চাহিদা, আগ্রহ, ক্ষমতা প্রকৃতিবাদীদের কাছে প্রধান। তাঁদের মতানুসারে শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল:

  1. শিক্ষার্থী প্রকৃতির একটি অংশ। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই শিক্ষার্থীর জীবনের রীতি-নীতি নিয়ন্ত্রিত হবে। 
  2. শিক্ষার্থীর জীবন প্রকৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই প্রাকৃতিক নিয়ম ভালভাবে মেনে চলার জন্য তাকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
  3. শিক্ষার্থী নিজের প্রকৃতি অনুযায়ী বিকাশ লাভ করবে। বাইরে থেকে কেউ তাকে কোন প্রকার বাধা বা নিয়ন্ত্রণ করবে না।
  4. শিক্ষার্থী তার আগ্রহ, চাহিদা বা সামর্থ্য অনুযায়ী পছন্দনীয় বিষয়ে শিক্ষা লাভ করবে। কোন ধরা বাঁধা পাঠ্যক্রমের আওতায় সে শিখবে না।
  5.  শিক্ষার্থী একটি যন্ত্রের মত। সে প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে কাজ করবে। শিক্ষার্থীর আধ্যাত্মিক বা মানসিক দিকের কোন গুরুত্ব নাই। সে যান্ত্রিকভাবে প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে কাজ করবে।


প্রকৃতিবাদ অনুসারে শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য

প্রকৃতিবাদে শিক্ষকের ভূমিকা সম্পর্কে অভিনব ধারণা পাওয়া যায়। এখানে শিক্ষকের ভূমিকা গৌণ। তিনি দর্শক ও পর্যবেক্ষকের কাজ করবেন। নিম্নে শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল :

  1. শিক্ষকের ভূমিকা হবে দর্শকের। তিনি পিছন থেকে পর্যবেক্ষণ করবেন মাত্র। তিনি কোন জ্ঞান বিতরণ করবেন না বা শিক্ষার্থীকে প্রভাবিত করবেন না। তিনি শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক বিকাশে সহায়তা করবেন মাত্র। শিক্ষক এমন পরিবেশ সৃষ্টি করবেন যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী স্বাভাবিকভাবে বিকাশ লাভ করতে পারে।
  2. শিক্ষার্থীর বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকা গৌণ হলেও প্রকৃতিবাদীরা শিক্ষককে শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ বলে মনে করেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীর বিকাশের জন্য পরিবেশ তৈরি করবেন, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করবেন এবং শিক্ষার্থীর বর্ধনের সুযোগ সৃষ্টি করবেন।
  3.  শিক্ষক শিক্ষার্থীর আগ্রহ, পছন্দ, চাহিদা ও সামর্থ্য মোতাবেক কাজের স্বাধীনতা দেবেন। শিক্ষার্থীর কাজে কোন বাঁধা দেবেন না, তিনি থাকবেন অন্তরালে।
  4. চরিত্র গঠন ও নীতি আদর্শ সম্পর্কে শিক্ষক শিক্ষার্থীকে কোন উপদেশ শিক্ষা দেবেন না।
  5. শিক্ষার্থীকে এমন কিছু শিক্ষা দেওয়া উচিৎ নয় যাতে তার মন চিরদিনের জন্য ছাঁচে ঢালাই হয়ে যায়। এজন্য তাকে পড়তে শেখানোর দরকার নাই।

Related: চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস ও তার শিক্ষাদর্শন|

সমালোচনাঃ 

শিক্ষায় প্রকৃতিবাদের অবদান অপরিসীম। আধুনিক বিশ্বে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রকৃতিবাদের মূল ধারণা দ্বারা প্রভাবিত। কেন্দ্রবিন্দুতে আছে শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের প্রতি শাসন, শৃঙ্খলার পরিবর্তে মানবিক দৃষ্টির প্রবর্তন হয়েছে প্রকৃতিবাদে । শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর স্বভাবের উপর অত্যাধিক এ শিক্ষাদর্শনের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এ মতবাদে যা অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ মতবাদ বিভিন্ন দিক দিয়ে সমালোচিত হয়েছে।

প্রথমত: প্রকৃতিবাদীরা শিক্ষার যথাযথ লক্ষ্য উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা শিক্ষার্থীর সকল বৃত্তিকেই স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু এর ফলে শিক্ষার্থীর কু-প্রবৃত্তিকেও বিকাশের দুযোগ দিতে হয়। কিন্তু এটা শিক্ষার প্রকৃত আদর্শ হতে পারে না।

দ্বিতীয়ত: প্রকৃতিবাদে শিক্ষার্থীর বিকাশকে এতো বেশী মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যে কোন প্রকার বাঁধা বা হস্তক্ষেপ চলবে না। ফলে শিক্ষার জন্য শিক্ষালয় এবং শিক্ষকের তেমন কোন প্রয়োজন থাকে না।

তৃতীয়: প্রকৃতিবাদীরা কৃষ্টিমূলক বা মানবিক বিষয়গুলোকে শিক্ষাক্ষেত্রে অবহেলা করেছে। ফলে সাহিত্য, শিল্পকলা, সঙ্গীত প্রভৃতি এ শিক্ষাদর্শনে উপেক্ষিত হয়েছে।

চতুর্থত: প্রাকৃতিবাদে মানুষের জৈবিক প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে আত্মিক প্রকৃতিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে মানুষ যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।

পঞ্চমত: প্রকৃতিবাদী শিক্ষাদর্শনে শিক্ষার্থীকে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের বিরোধীতা করা হয়েছে। কিন্তু নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা শিক্ষার্থীর জন্য অত্যাবশ্যকীয়, যা তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

পরিশেষে বলা যায়, উপর্যুক্ত সমালোচনা সত্ত্বেও প্রকৃতিবাদ শিক্ষাক্ষেত্রে একটি মৌলিক মতবাদ। এ দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে শিক্ষার্থী। এখানে শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে যা তার বিকাশের জন্য খুবই সহায়ক। এ কারণে প্রকৃতিবাদ শিক্ষাদর্শনের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম মতবাদ।

 

Courtesy 

Information Collected From:  শিক্ষাদর্শন(মোঃ আমােজ উদ্দিন,সুভাষ চন্দ্র দাস) 


Collected By:Shahriar Tanzid Shaon

SHAON
আমি শাহরিয়ার তানজিদ শাওন। আমি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত আছি। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্লগে আর্টিকেল লিখতে ভালো লাগে। আলহামদুলিল্লাহ🥰🌺

 

 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.